ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বার্গম্যানের রায় নিয়ে বিবৃতি

১৪ বিশিষ্ট নাগরিকের ক্ষমা প্রার্থনা, ১০ জনের দুঃখ প্রকাশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
১৪ বিশিষ্ট নাগরিকের ক্ষমা প্রার্থনা, ১০ জনের দুঃখ প্রকাশ

ঢাকা: আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া জরিমানা ও এজলাসকক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার সাজার রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া ৪৯ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ১৪ জন। অপর ১০ জন নিজেরাই ব্যাখ্যা প্রদান করে দুঃখ প্রকাশ এবং  পরবর্তী ধার্য দিনেও নিজেরাই শুনানি করবেন বলে জানিয়েছেন।

বাকি ২৫ জনের আইনজীবী ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য সময়ের আবেদন জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। শুনানি শেষে সময়ের আবেদন জানানো ২৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের আবেদন মঞ্জুর করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিদেশে থাকা বাকি ১১ জনকে উপযুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে) মঙ্গলবার বিকেল তিনটার মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ১২ জন। তারা হলেন বদিউল আলম আজম মজুমদার, রাশেদা কে চৌধুরী, ইমতিয়াজ আহমেদ, আমেনা মহসীন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আসিফ নজরুল, লায়লা খান, শাহনাজ হুদা, জাকির হোসেন, অরুপ রাহী, শাহীন ‍আখতার ও ইলিরা দেওয়ান।

অন্য দু’জন ড. শাহদীন মালিক ও হাফিজ উদ্দিন খান ব্যাখ্যা প্রদান করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবী এম শামসুল হকের মাধ্যমে।  

আর ১০ জন নিজেরাই ব্যাখ্যা প্রদান করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তারা ব্যাখ্যায় বলেন, আমরা যে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছি, তাতে আদালত অবমাননার কোনো বিষয় ছিল না। তারপরও ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন যে, এতে আদালতের সম্মান বা মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে, সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই ১০ জন  পরবর্তী ধার্য দিনেও নিজেরাই শুনানি করবেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়াও ২৫ জনের পক্ষে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আনিসুল হাসান ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে সময়ের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল ২৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের সময় আবেদন মঞ্জুর করেন। বাকি ১১ জন বিদেশ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে আইনজীবীর কাছে ব্যাখ্যা দেওয়ায় তাদেরকে উপযুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে) ব্যাখ্যা দিতে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এজন্য মঙ্গলবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়েছে তাদেরকে।

গত ১৪ জানুয়ারি বিবৃতি দেওয়া ড. শাহদীন মালিকসহ দেশের ৪৯ বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার ২৭ জানুয়ারির মধ্যে তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে বা আইনজীবীদের মাধ্যমে বিবৃতি ও আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল।

৪৯ জনের মধ্যে ১১ জন দেশের বাইরে অবস্থান করায় ট্রাইব্যুনাল তার আদেশ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দূতাবাসের মাধ্যমে ওই ১১ জনকে অবহিত করা এবং তাদের ব্যাখ্যা সংগ্রহ করে ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আদেশ দিয়েছিলেন।

ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগে আপত্তিকর মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ নাগরিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২। তাকে ওইদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত এজলাসকক্ষে বসে থাকতেও হয়। রায়ে ডেভিড বার্গম্যান কিভাবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করছেন, তা খতিয়ে দেখতে সরকারকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

পরে জরিমানা পরিশোধ করা ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বর্তমানে ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউএজের বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের জামাতা।

এরপর গত বছরের ২০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোয় ‘বার্গম্যানের সাজায় ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ’ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়েছিল, এ রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

এ প্রতিবেদন নজরে এলে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোকে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ওই বিবৃতির মূল কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।

১৪ জানুয়ারি বিবৃতি দানকারী ৫০ বিশিষ্টজনের নাম-পরিচয় ও তাদের বর্তমান অবস্থানস্থল সম্পর্কে লিখিতভাবে জানান ড. শাহদীন মালিক। এর আগের দিন ১৩ জানুয়ারি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ৫০ বিশিষ্টজনের স্বাক্ষরিত বিবৃতির মূল কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রথম আলো। এছাড়া বিবৃতিটি প্রথম আলোর মেইলে ই-মেইল করে পাঠানো হয়েছিল লেখক ও সংগঠক হানা শামস আহমেদ এর মেইল থেকে। প্রথম আলো হানা শামস আহমেদের সম্পর্কেও জানায় ট্রাইব্যুনালকে।

৫০ বিশিষ্টজনের মধ্যে একজন খুশি কবির পরে জানিয়েছিলেন, বিবৃতিটিতে তিনি স্বাক্ষর করেননি বা এর সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই বলেও জানায় প্রথম আলো। এ কারণে খুশি কবিরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি ৪৯ জনের বিষয়ে শুনানি হয়।

অন্যদিকে বার্গম্যানের আদালত অবমাননার রায়ের পরে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ‘Muzzling Speech in Bangladesh’ শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। ২৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোকে আদেশ দানের পাশাপাশি এ সম্পাদকীয় নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ওই সম্পাদকীয়তে বার্গম্যানের শাস্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানানোয় বিস্ময় প্রকাশও করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল ওইদিন তার আদেশে বলেন, দৈনিক প্রথম আলোয় ‘বার্গম্যানের সাজায় ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ এবং ‘Muzzling Speech in Bangladesh’ শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয় ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। এ ধরনের সংবাদ এবং সম্পাদকীয় প্রকাশ আদালতের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেন, নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে অবমাননা করেছে।

আদালত অবমাননার দায়ে ডেভিড বার্গম্যানের শাস্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রকাশিত সম্পাদকীয় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আরো বলেন, আমরা বুঝতে পারছি না, কিভাবে একটি বিদেশি দৈনিক একটি স্বাধীন দেশের আদালতের আদেশ প্রত্যাহার করতে বলে!

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫/আপডেট : ১৩২০ ঘণ্টা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।