রাজশাহী: ‘আমরা গরিব মানুষ। পুড়ে যাওয়ার পর থেকে সরকার আমাদের ওষুধপত্র ও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বুধবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে অগ্নিদগ্ধ ৯ রোগীকে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। সেই টাকা হাতে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কল্যাণ কামনা করে এভাবেই কথাগুলো বলেন পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ চার বছরের শিশু আছিয়ার মা শিউলি বেগম।
পেট্রোল বোমায় দগ্ধ ট্রাকচালকের সহকারী সাহাবুরের মা কোহিনুর বেগম বলেন, সপ্তাহের সাড়ে আটশ’ টাকা কিস্তির জন্য ছেলে অবরোধের সময় ঝুঁকি নিয়েই ট্রাকে গিয়েছিল। কিন্তু গিয়ে নাশকতাকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় ছেলের শরীরটাই পুড়ে গেছে। পরে সেই কিস্তির টাকাও সংগ্রহ হয়নি।
এর ওপর ছেলের এমন অবস্থায় সংসার চালানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। এখন বসুন্ধরা গ্রুপের এ টাকায় কিস্তি শোধ করা যাবে। ছেলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত চালানো যাবে সংসারও।
তানোরের অগ্নিদগ্ধ জুলেখা বেগম জানান, ঢাকার একটি গার্মেন্টেসে কাজ করেন তিনি। তার স্বামী মজিবর কাশিমপুর নয়াপাড়ায় মণ্ডল গার্মেন্টসে কাজ করেন। ভাগ্নির নবজাতক শিশুকে দেখে ফেরার পথে এ ঘটনা। বাসে আগুন দেওয়ায় নাতনি ফারজানা ও তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে আসেন।
দুর্বৃত্তদের হামলায় তার দুই হাত ও মুখমণ্ডল ঝলসে গেছে। নাতনি ফারজানারও বা হাত ও মুখের বা পাশ পুড়ে গেছে। একটি চোখ দিয়ে কিছু দেখা যাচ্ছে না। শরীরজুড়ে কেবলই পোড়া যন্ত্রণা। টাকার জন্য এ অবস্থায় রেখেই স্বামী ঢাকা চলে গেছেন আজ। শরীরের ক্ষত আর অভাবের সংসার নিয়ে তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের আর্থিক সহায়তা তার মনে আবারও শক্তি যুগিয়েছে।
এভাবে সমাজের বিত্তশালীরা অসহায়দের পাশে দাঁড়ালে গরিবের উপকার হবে বলে মন্তব্য করেন জুলেখা বেগম।
আর্থিক সহায়তা পাওয়া হতদরিদ্র পরিবারের নয়জন রোগী এবং তার স্বজনেরা এভাবেই তাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে থাকেন বসুন্ধরা গ্রুপের আর্থিক সহায়তা পেয়ে। বিপদের মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে আসায় রোগী ও তাদের স্বজনেরা প্রাণভরে দোয়া করেন প্রতিষ্ঠানটির জন্য। প্রকাশ করেন কৃতজ্ঞতাও।
এ সময় অগ্নিদগ্ধ নয়জন রোগীর হাতে ২০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। পেট্রোল বোমার নাশকতার আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন এসব রোগীর মধ্যে রয়েছে দু’জন ছোট্ট শিশু। দগ্ধ এসব রোগী অতি দরিদ্র পরিবারের সদস্য। গত কয়েক দিনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকে ছুড়ে মারা পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়েছেন তারা।
সহায়তাপ্রাপ্তরা হলেন- রাজশাহীর তানোরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমায় আহত শিশু আছিয়া খাতুন (৪), তার নানী আনোয়ারা বেগম (৪৫), তানোরের ইলান্দ পাকচাঁনপুর গ্রামের ফারজানা খাতুন (৭), তার নানি জুলেখা বেগম (৪০), মোহনপুর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের আশরাফ আলী (৫০), চারঘাটে ট্রাকে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ পুঠিয়া উপজেলার কাঠালবাড়ি গ্রামের ট্রাকচালক তরুণ বিশ্বাস স্বস্তি (৩৫), তার সহকারী কানাইপাপাড়া গ্রামের শাহাবুর রহমান (১৯), বেলপুকুরে ট্রাকে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ শামিউল ইসলাম (২৫) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রাকে পেট্রোল বোমায় আহত জাফর ইকবাল (২৫)।
** ৯ অগ্নিদগ্ধ রোগীকে বসুন্ধরা গ্রুপের আর্থিক সহায়তা
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫