ঢাকা: ‘আমার মাটি আমার মা, ময়লা হতে দেবো না’ স্লোগানে গত ৩ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘দেশটাকে পরিষ্কার করি দিবস’ পালন করা সামাজিক সংগঠন ‘পরিবর্তন চাই’ এবার রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের দাবিতে অনশনে নেমেছে।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এ দাবি জানায় তারা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরিবর্তন চাই এর ৭ জন সংগঠক ফিদা হক, দিদারুল ইসলাম, এহসানুল আলম, সাদিক রহমান, মৌমিতা দেব, তারিক আহমেদ ও সাজ্জাদ হোসেন অলি ২৪ ঘণ্টার প্রতীকী অনশন শুরু করেছেন দুপুর ১২টা থেকে।
বিকেলের কর্মসূচিতে ছিল প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পায়রা ও ফানুস ওড়ানো পর্ব। রেবাবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় অনশন কর্মসূচি শেষ হবে বলে জানানো হয়। সে সময় পর্যন্ত শহীদ মিনার চত্ত্বরের পাশে টানা অবস্থান করবেন প্রতিবাদকারীরা।
ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশাল ও সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পরিবর্তন চাই এর আয়োজনে শনিবার সকাল ১১টায় মানববন্ধন, গায়েবানা জানাজা ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকার সমাবেশে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিবাদ নাগরিক সমাজ করতে পারেনি। এ দায় মেটানোর জন ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব আমাদের সকলকেই নিতে হবে।
মুহিদুল হক বলেন, দুষ্ট লোকরাই ঐক্যবদ্ধ থাকে। আমাদের দরকার ভালো মানুষদের সম্মিলন।
জাকিয়া বেগম বলেন, দেশে কতো বড় সংকট হলে পরিবর্তন চাই এর মতো একটি সবুজ সংগঠন এমন একটি আয়োজন করতে বাধ্য হয়।
জিয়াউর রহমান প্রত্যেককে পরিবর্তনের জন্য কাজ করার আহবান জানান। তিনি নতুন নেতৃত্বের দাবি জানান।
অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম বলেন, এ দেশে কখনো হরতাল হয় না, হয় ভয়তাল। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকারের সীমা দাঁড় করিয়ে দেওয়া অপরিহার্য মনে করেন তিনি।
গত ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ ফারুক হোসেনের ভাই মিজান, একই ঘটনায় আরেকজন অগ্নিদগ্ধ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. বিল্লালের ভাই মো. সোহাগ এবং ২২ জানুয়ারি সিলেটে অগ্নিদগ্ধ ট্রাকের হেলপার মো. সাইজুদ্দিন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। তারা প্রত্যেকে এ ঘটনাগুলোর বিচার চান।
সাইজুদ্দিন বলেন, রাস্তায় আমার আপনার কারোরই নিরাপত্তা নাই। আমরা বোমার আঘাতে মারা পড়বো আর আপনারা ক্ষমতার জন্য লড়াই চালাবেন?
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা না করলে সহিংসতার বিকাশ ঘটতেই থাকবে। সদিচ্ছা থাকলে অনতিবিলম্বে সংলাপসহ সকল রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, সহিংসতা এখনই বন্ধ করতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করার নামে নতুন সহিংসতা করা যাবে না।
গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আমাদের মূল সমস্যার দিকে তাকাতে হবে।
পরিবর্তন চাই এর পক্ষ থেকে আমির হোসেন, তাহের চৌধুরী সুমন ও চেয়্যারম্যান ফিদা হক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
ফিদা হক বলেন, আমরা রাস্তাঘাট ঝাড়ু দেই, দেশটাকে পরিষ্কার করতে চাই, রাস্তাঘাটে ডাস্টবিন বসাই। কিন্তু সবকিছু অর্থহীন হয়ে যায়, যখন আমাদের মাঝে সাইজুদ্দিন, সোহাগ, মিজানরা (অগ্নিদগ্ধ ও তাদের স্বজনরা) উপস্থিত হন। দেশে যে বিশাল তরুণ শক্তি রয়েছে তাদেরকে উদ্যোগ নিয়ে নতুন বিকল্প শক্তি দাঁড় করতে হবে।
ফিদা হক চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে-রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে, বংশানুক্রমিক গণতন্ত্রের অবসান করতে হবে এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থপতি মুবাশ্বির হোসেন, ফারজানা শাহনাজ মজিদ, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম, মুহিদুল হক, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, নাগরিক ঐক্যের জাকিয়া বেগম ও ইফতেখার আহমেদ এবং পল্লীমা সংসদের হাফিজুর রহমান ময়না।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দিদারুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫