ঢাকা: তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে দায়ের করা এ মামলার সময়কালে শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলের নেতা।
মামলার ১৩ বছর পর সব আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করা প্রতিবেদনটি কমিশন অনুমোদন দিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে দুদকের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র।
সম্প্রতি দুদকের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ চূড়ান্ত এ প্রতিবেদনটি নিম্ন আদালতের জেনারেল রেকর্ডিং শাখায় দাখিল করেছেন।
মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুদকের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ২০০২ সালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলাটি দায়ের করেছিল। যেসব অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এজন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি কমিশন নিয়ম অনুযায়ী আদালতে পাঠিয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সে সময়কার বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট একনেক সদস্যদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৩টি মামলা করে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
ব্যুরোর পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে একটি এবং অ্যান্টি করাপশন অফিসার (এসিও) খান মো. মিজানুল ইসলাম বাদী হয়ে দু’টি মামলা করেন। তিনটি মামলায়ই তখনকার বিরোধী দলের নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান এবং অভিন্ন আসামি করা হয়। মামলাগুলোতে যথাক্রমে ৭ জন, ৮ জন এবং ১২ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিদের মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং শিক্ষামন্ত্রী এএইচএসকে সাদেক মারা গেছেন।
অন্যদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর অভিযোগের দায় থেকে উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আলোচিত মামলাগুলো ১৩ বছর ধরে পড়েছিল দুদকের অনিষ্পন্ন শাখায়। দুর্নীতি দমন ব্যুরো দুর্নীতি দমন কমিশনে রূপান্তরিত হওয়ার পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের কমিশন মামলাগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন।
বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে শেখ হাসিনা পৃথক দু’টি রিট (নং-৭৯৬৬/০৫ এবং ৭৯৬৭/০৫) করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের ৪ মার্চ চার্জশিট দাখিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন।
এ সময় মামলা সম্পর্কে আদালত বলেন, নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলা শেখ হাসিনাকে হয়রানি করা এবং হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যেই দায়ের করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্তকে আমলে নিয়ে মামলাগুলো করা হয়। সিদ্ধান্তগুলো ছিল- প্রকল্পের পরামর্শকের ব্যয় বৃদ্ধি, ভবন নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় বৃদ্ধি।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে উচ্চ আদালত থেকে বলা হয়, অভিযোগগুলো ফৌজদারি আইনের কোনো বিধানের আওতায় পড়ে না। এ মামলা চললে বিবাদী আরও হয়রানির সম্মুখীন হবেন। আদালত পর্যবেক্ষণে এটাও বলেন, মামলার নথিপত্র উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
পরে ওই তিন মামলার চার্জশিট আর দাখিল হয়নি। এরপর দুদক এ মামলাগুলোর পুনর্তদন্ত করতে দুদকের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় কমিশন অব্যাহতির সুপারিশ করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুমোদন দিয়ে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫