রাজশাহী: সকাল থেকে সন্ধ্যা। সব সময় ভিড়।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম বিনোদন স্পট বড়কুঠি পদ্মার পাড় এলাকার চটপটি বিক্রেতা শাহজামাল। তার মতো পদ্মা পাড়ের অন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালে খাঁ খাঁ করছে রাজশাহীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো। নাশকতার আতঙ্কে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। আর এ কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পরিবারেও দুর্দিন নেমে এসেছে।
রাজশাহীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আই বাঁধ ও ঐতিহ্যবাহী বড়কুঠিকে ঘিরে প্রায় ৫ কিলোমিটার পদ্মার পাড়, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, জিয়া শিশু পার্ক, ভদ্রায় ক্যাপ্টেন মনসুর রহমান পার্ক ও বরেন্দ্র জাদুঘর অন্যতম। কিন্তু টানা অবরোধে এসব জায়গা দর্শনার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে বিনোদন কেন্দ্রগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকারও।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানের কেয়ারটেকার আকবর হোসেন জানান, এখন পিকনিকের মৌসুম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ মৌসুমে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি পার্টিকে পিকনিক স্পট বরাদ্দ দেওয়া যেতো। স্থান সংকুলান না হলে স্পট ভাগ করে দিতে হতো। হিমশিম খেতে হতো দায়িত্ব পালনকারী কর্মচারীদের। কিন্তু অবরোধ-হরতালের কারণে বাইরের কোনো পিকনিক পার্টি আসছে না। স্থানীয়ভাবে অনেকে আসছেন বার্ষিক বনভোজনে। তবে তার সংখ্যা খুবই কম। এছাড়া পিকনিক মৌসুমে প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে উদ্যানের আয় একেবারেই কমে গেছে। ৩০ দিনে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে উদ্যানটির।
রাজশাহীতে শিশুদের বিনোদনের অন্যতম স্থান জিয়া শিশু পার্কের সুপারভাইজার আফাজ উদ্দিন জানালেন, হরতাল-অবরোধের কারণে তাদের অবস্থাও খুব খারাপ। প্রতিদিন শিশু পার্কে ১৫০ থেকে ২০০টির বেশি টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। অথচ স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টিকিট বিক্রি হতো। অবরোধে এরই মধ্যে তাদের প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, সব বয়সের প্রধান বিনোদনের জায়গা হচ্ছে পদ্মা নদীর পাড়। মহানগরীর কোলঘেঁষে প্রায় ৫ কিলোমিটার জুড়ে মনোরম পদ্মার পাড়। বিনোদনের এ জায়গাকে ঘিরে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের জীবিকা চলে। কেউ চটপটি, কেউ পেয়ারা, কেউ বাদাম, কেউ ভাজা দ্রব্যের বিক্রেতা। কেবল ফুচকা বিক্রি করে পরিবারের খরচ চালান অনেকে। আবার কেউ নৌকায় ভ্রমণ করিয়ে তা থেকে আয় করেন। কিন্তু পদ্মার পাড়ে ভ্রমণপিপাসু মানুষ কমে যাওয়ায় এমন মেহনতি মানুষের আয়ও কমে এসেছে।
বড়কুঠির পদ্মাতীরে নৌকার মাঝি ফরিদ শেখ জানান, অবরোধ-হরতালের আগে এ ঘাটে পর্যটকদের নৌকাভ্রমণ করিয়ে প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা আয় হতো। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩/৪শ’ টাকায়। তাই এ অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ কামনা করেন তিনি।
তাদের মতো ছোট আয়ের মানুষের দিকে তাকিয়ে শিগগিরই একটি সুষ্ঠু সমাধানে এগিয়ে আসার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতাদের প্রতি দাবি জানান ফরিদ শেখ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫