ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পেট্রোল বোমায় ৭ খুন

শেষ স্মৃতিও কেড়ে নিল রাজনীতির আগুন

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
শেষ স্মৃতিও কেড়ে নিল রাজনীতির আগুন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আইকন পরিবহনের পুড়ে যাওয়া বাস

কুমিল্লা: মা সমুদ্রে তোলা ছবিগুলো বাসায় নিয়ে সবাইকে দেখাবো। অনেক সুন্দর হয়েছে ছবিগুলো।

মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুযারি) ভোরে বাসে বসে মায়ের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো দেখিয়ে মাইশা এমনটিই বলেছিলো।

পেট্রোল বোমায় আহত মাফরুহা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, মাইশা বাসে আমার পাশেই বসেছিল। আমার ভ্যানিটি ব্যাগে ছিল আমার সঙ্গে তোলা মাইশার শতাধিক ছবি আর মাইশার ভ্যানিটি ব্যাগে ছিল তার সঙ্গে তোলা আমার ও তার বাবার ছবি। সে ছবিগুলো বারবার দেখছিল আর কতক্ষণে বাড়িতে গিয়ে সবাইকে দেখাবে সে নিয়ে উদগ্রীব ছিল। কথাগুলো বলতে গিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

কিছ‍ুক্ষণ পরে নিজেকে সামলে নিয়ে আরো বলেন, বাসে পেট্রোল বোমাটি ছোড়ার পর আমি ও মাইশা দু’দিকে ছিটকে পড়ি। আমি মাথায় আঘাত পাই। এ সময় আমার কানে ভেসে আসছিল-মা আমাকে বাঁচাও। আর কিছু মনে করতে পারছি না। আমার স্বামীও চিৎকার করেছিল একই সময়।

তিনি বলেন, আমি তো এভাবে বাঁচতে চাইনি। রাজনীতির আগুন আমার স্বামী ও মেয়েকে নিয়েছে।

মাফরুহা তার মেয়ের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মাইশার ব্যাগে ছিল স্বামী ও মেয়ের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো। সে ছবিগুলো পুড়ে গেছে। রাজনীতির সর্বনাশা আগুন শেষ স্মৃতিগুলোও কেড়ে নিয়েছে।

মাফরুহার মাইশা ছাড়াও আর একটি ছেলে রয়েছে। জীবনে চলার পথে ওই ছেলেটিই এখন তার একমাত্র সম্বল।

যশোর জেলা পিডব্লিউডির ঠিকাদার নুরুজ্জামান পবলু (৫০) তার স্ত্রী মাফরুহা বেগম ও মেয়ে মাইশা নাইমা তাসনিনকে (১৬) নিয়ে শুক্রবার কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলেন। বেড়ানো শেষে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় ফিরছিলেন তারা। পথে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় স্বামী ও মেয়ে দু’জনকেই হারিয়েছেন মাফরুহা বেগম। কপালে আঘাত নিয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও দুঃখের সাগরে ডুবে গেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর পৌনে ৪টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারের জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের বাসে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৬ জন।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া এলাকার কৃষক ইউসুফ (৫৫), যশোর জেলার পিডব্লিউডির ঠিকাদার নুরুজ্জামান পবলু (৫০) ও তার মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা নাইমা তাসনিন (১৬), ঢাকার কাপ্তানবাজার এলাকার ওয়াসিম ও নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার পলাশ গ্রামের মাহমুদুল হোসেন শান্ত (১৬)।

আহতদের মধ্যে ১৫ জন চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, নয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ও দু’জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।