ঢাকা: হরতাল-অবরোধে সারা দেশে গণপরিহন ও পণ্য পরিবহন মিলিয়ে এ খাতে প্রতিদিন প্রায় ৩শ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী তোফাজ্জল হোসেন।
তবে এর মধ্যে পণ্য পরিবহনের ২শ‘ কোটি টাকা এবং গণপরিবহনের ১শ’ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় তিন লাখ গণপরিবহন আছে। পণ্য পরিবহনে রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩২টি যানবাহন, এর মধ্যে খোলা ট্রাক রয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ২শ’ ৪০টি এবং কাভার্ডভ্যান রয়েছে ১৪ হাজার ৭শ’ ৯২টি।
জানুয়ারি মাসে ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধে প্রায় তিন শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং প্রায় ৬শ’ গাড়ি ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা। সহিংস এই হরতাল-অবরোধে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে ৪০ জন আগুনে পুড়ে মারা গেছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করেন তিনি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো উল্লেখ করা হয়, পণ্য পরিবহনের যে সংখ্যক গাড়ি আছে তার ৬০ শতাংশই কিস্তির মাধ্যমে নেওয়া। প্রতিমাসে ৫৮ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হচ্ছে ব্যাংককে।
‘পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিকরা রাজনীতি বোঝে না’ মন্তব্য করে হাজী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমরা সবাই পেট নীতি বুঝি। কারণ, গাড়ি চালাতে হবে, নিজেকেও চলতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক আন্দোলন বলেন আর ছাত্র আন্দোলন যেটাই হোন, প্রথমেই আঘাত আসে পরিবহনের ওপর। দেশের কোনো কিছু হলেই রাস্তায় গাড়ি জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুর করা হয়।
তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টরে বিনিয়োগ বেশি হলেও লাভের তুলনায় ক্ষতিটাই বেশি পোহাতে হয় আমাদের।
‘একমাত্র পরিবহন মালিকরাই বছরের শুরুতে সরকারকে আগাম ট্যাক্স প্রদান করে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা থাকলেও আমরা এর কোনো সুবিধা পাই না। ’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মালিকদের কাছ থেকে বিআরটিএ ও পুলিশ প্রশাসনসহ সরকার অধিক ট্যাক্স পেয়েও পরিবহন সেক্টরকে সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করছে না। বিআরটিএ ও পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।
চাকা বন্ধ থাকলেই আমাদের লোকসান। রাজনৈতিক দলগুলো কি আমাদের লাভ দিয়ে যাবে? তাই গাড়ি চালানো ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। তবে সরকার বলছে, হরতাল-অবরোধে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর জন্যই আমরা গাড়ি চালানো বন্ধ করিনি।
রাজধানীর বিভিন্ন ট্রাক স্ট্যান্ড ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ পণ্য পরিবাহী ট্রাক ও কার্ভাড ভ্যান স্ট্যান্ডে পড়ে আছে। চালকরা দীর্ঘদিন যাবৎ বাড়ি যেতে পারছে না। না খেয়েও দিন অতিবাহিত করছে তারা। হরতাল-অবরোধের কারণে স্ট্যান্ডে চালক ও শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন কাটছে।
এ প্রসঙ্গে ট্রাক চালক বাহার মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে গাড়ি নিয়ে ঢাকায় এসে ১৭ দিন যাবৎ আটকা পড়ে আছি। হরতাল-অবরোধের জন্য ইনকাম বন্ধ। এমন অবস্থায় তিন বেলা খাওয়ার জন্য টাকা ধার করতে হচ্ছে। কোনো কোনো দিন না খেয়ে থাকতেও হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ হতো কিন্তু গত ৫ দিনে তাও হয় না। কারণ ফোন করার মত টাকাও নেই। ’
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে পরিবহন খাতের চাকা সচল থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমেদ মজুমদার।
‘পরিবহন সেক্টর ধ্বংসের মূলে নগ্ন রাজনৈতিক কালচারই দায়ী’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দেশের পরিবহন খাত জনগণের জন্য, কোনো রাজনৈতিক দলের একার নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস আন্দোলনের কারণেই পরিবহন খাত আজ হুমকির মুখে পড়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকরা তাদের পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে। শ্রমিকরা গাড়ি না চালাতে পারলে খাবে কিভাবে? তাদের সংসারই বা চলবে কিভাবে?’
‘এ কারণেই সংগঠনের পক্ষ থেকে গাড়ি চালানোর জন্য জোরও করা হচ্ছে না আবার বন্ধও রাখতে বলা হচ্ছে না। ’
‘খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের এই পাঁটি মৌলিক চাহিদা পূরণেও পরিবহন খাতের ভূমিকা অনেক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাদ্য-দ্রব্য ও বস্ত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর কাজে পরিবহন, শিক্ষার ক্ষেত্রে বই-পুস্তক বহনে, সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রী বহনে পরিবহন সেক্টর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবুও এই খাতটি বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ’
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দয়া করে পরিবহন সেক্টরকে সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আওতামুক্ত রাখুন। ’
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবহনগুলোর বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগুনে পুড়ে ও ভাংচুরে যেসব গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে সেগুলোর লিস্ট করা হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে, যাতে ক্ষতির সঠিক হিসেব আমরা দিতে পারি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫