ঢাকা: দেশজুড়ে চলমান সন্ত্রাস, হত্যা, অগ্নিসংযোগ করে যারা নাশকতা করছে তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। এসব নাশকতা বন্ধ করলে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
তবে সরকার কোনো চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে পেশাজীবী সমাবেশে একথা বলেন তিনি।
পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারী, পুড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকারী ও নির্দেশনা প্রদানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এবং দেশের উন্নয়ন-অর্থনীতি ধ্বংসকারী হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এই সন্ত্রাস, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। তাহলে হয়তো আলোচনা হতে পারে। তা না হলে সংলাপের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে কোনো নজির নেই যে, সন্ত্রাসীদের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে কোনো সরকার সংলাপ করেছে। যেমনটি করেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি জান্তার চাপের মুখে। তার কন্যা শেখ হাসিনাও সন্ত্রাসীদের কাছে নতি স্বীকার করবেন না।
যারা সংলাপের কথা বলছেন, তারা মূলত জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার মানসিকতা দেখাচ্ছেন উল্লেখ করে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আজ আমরা দেখছি, খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানানোর জন্য আমাদের অনেক সম্মানিত ব্যক্তিরা তার কার্যালয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন, তাদেরকে দেখতে তো যাওয়া হচ্ছে না। একজন ব্যক্তিকে যদি সহানুভূতি দেখানো যায় তাহলে কি ৫০ জনকে সহানুভূতি দেখানো যায় না?
তিনি বলেন, তাদের মনে হয় বিবেক বলতে কিছু নাই।
কোকোর শোক বইয়ে স্বাক্ষরকারী বিদেশি কূটনীতিকদের সমালোচনা করে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আরাফাত রহমান কোকো প্রমাণিত একজন চোর। আদালতের রায়ে তিনি একজন চোর। তার মৃত্যুতে কয়েকজন ডিপ্লোম্যাটিক (কূটনীতিক) শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন। আমি প্রশ্ন করতে চাই, যিনি আইন লঙ্ঘন করেছেন, বিদেশে টাকা পাঠিয়ে মানিলন্ডারিং করে অপরাধী হয়েছেন তার পক্ষে কোনো ডিপ্লোম্যাটিক স্বাক্ষর করতে পারেন কি-না? আমরা তাদেরকে ধিক্কার জানাতে চাই।
দেশে যে পাশবিকতা চলছে তা থেকে উত্তরণের জন্য কি পথ অনুসরণ করতে হবে তা মানবাধিকার সংগঠন অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
সমাবেশে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পাকিস্তানি বাহিনীর মতো দেশের মানুষ চান না, তিনি চান দেশের ক্ষমতা। আর ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তিনি এখন দেশের মানুষ হত্যা করছেন।
তিনি বলেন, নিজের পুত্রের জন্য শোক হয়। অথচ দেশের শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন, তাতে তার দু:খ লাগে না।
অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, খালেদা জিয়াকে বহু অনুরোধ করা হয়েছে, এসব বন্ধ করতে। কিন্তু তিনি তা শুনছেন না। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দেশে পেট্রোল বোমা হামলাসহ যেসব নাশকতা চলছে তার পেছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনীসহ পাকিস্তান সরকারের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। আইএসআই’র এজেন্ডা বাস্তবায়নে এসব নাশকতা চালানো এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতেই এসব কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
সমাবেশের বক্তারা দেশের পরিস্থিতি শান্ত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি করেন।
পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি সাবেক বিচারপতি এ এফ এম মেজবা উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি আব্দুল বাসেত মজুমদার, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, বাংলাদেশ শিক্ষক ফ্রন্টের সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব, ড. কামরুল হাসান খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫