জয়পুরহাট: উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট জেলার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে চালু হয়েছে ‘স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফট্ওয়্যার’ কার্যক্রম।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে একটি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের মুঠোফোনে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে তাদের কোমলমতি সন্তানদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড।
‘স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফট্ওয়্যার’ কার্যক্রমের ফলে বিদ্যালয়গুলোতে একদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে, অন্যদিকে অনেকটা দু:শ্চিন্তা মুক্ত থেকে অভিভাবকরা তাদের প্রাত্যহিক জীবন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারছে।
জয়পুরহাট রামদেও বাজলা (আরবি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৭ সালে জাতীয়করণ হয়। সেই থেকে জেলার একমাত্র সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। কিন্তু ছাত্রদের স্কুল পালানো, টাকা জমা না দিয়ে খরচ করে ফেলা, স্কুলে অনুপস্থিতিসহ নানাবিধ সমস্যা কিছুতেই যেন রোধ করতে পারছিলেন না শিক্ষকরা।
ঠিক এমনই মুহূর্তে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শাহীন আকতার দিনাজপুরের রংপুর জিলা স্কুল থেকে বদলি হয়ে আসেন জয়পুরহাট আরবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি তৈরি করলেন ‘স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফট্ওয়্যার’ নামে একটি ওয়েব সাইট। যে সফটওয়্যায়ের মাধ্যমে একজন অভিভাবক তার প্রিয় সন্তানের স্কুলে উপস্থিতি, স্কুল পালানো, অ্যাডমিট কার্ড, অটোমেশন টেবুলেশন শিট ও অটোমেশন টেস্টিমোনিয়াল পেয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়াও অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলের সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য বেতন দেওয়ার তারিখ, ছুটির ঘোষণা, রেজাল্ট ঘোষণার তারিখ, অনুপস্থিতি, পলায়ন বার্তাসহ স্কুলের সমস্ত নোটিশ এবং নেতন দেওয়ার পর স্কুল থেকে কনফার্মেশন ম্যাসেজ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এ সিস্টেমের ফলে বেতন ও সেশনসহ যাবতীয় পাওনা নেওয়ার পর অভিভাবকদের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে প্রাপ্তি ম্যাসেজ দিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও অভিভাবকরা লগ ইন করে ওয়েবসাইট থেকে তার সন্তানের বেতন দেওয়া সম্পর্কে হাল নাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে এবং ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার আসন বিন্যাস দেখতে পারছে।
আর এ সমস্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য তাকে আর স্কুলে আসতে হচ্ছে না। ফলে সময় ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়াও এসব স্কুলের জন্য ছবি সম্বলিত স্মার্ট অ্যাডমিশন রেজিস্টার তৈরি করা হচ্ছে যা অনেক তথ্য বহুল।
ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র মুন্নার বাবা ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সন্তানের স্কুলের যাবতীয় তথ্যাদী মুঠোফোনে এসএমএস’র মাধ্যমে জানতে পেরে খুব ভাল লাগছে।
আরবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমুল হক অনেকটা গর্ব সহকারে বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধ কিংবা বছরের শুরুর দুই মাস যেখানে ২০% শিক্ষার্থীকে পাওয়া যেতনা, সেখানে ‘স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার’ চালুর পর ৯৫% শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহীন আকতার বাংলানিউজকে জানান, দুই শিফটে প্রায় ১২শ শিক্ষার্থীকে কন্ট্রোল করতে এবং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা সর্ব মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছি। এরই স্বীকৃতি স্বরুপ সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় প্রধান অতিথি ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি আরবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও আইসিটি) আব্দুর রফিক বাংলানিউজকে বলেন, পর্যায়ক্রমে জেলার সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে এ সেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় এ সেবার আওতায় এসছে।
এছাড়াও কাজ শুরু হয়েছে জয়পুরহাট কালেক্টরেট বালিকা বিদ্যা নিকেতন ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫