ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা -২০১৪

শেরপুরে ২০ কিলোমিটারে ২০ বাঁকে ঝরে গেছে ২০ প্রাণ

বেলাল হোসেন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৫
শেরপুরে ২০ কিলোমিটারে ২০ বাঁকে ঝরে গেছে ২০ প্রাণ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেরপুর (বগুড়া): ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ২০টি বাঁকে এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন মারা গেছেন।

গত বছর বগুড়ার শেরপুর উপজেলার উত্তরে দশমাইল আর দক্ষিণের সীমাবাড়ী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।



এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন। এরপরও এসব এলাকায় দুর্ঘটনা তো কমেনি বরং বেড়েই চলেছে। নিহতের তালিকাও দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে।  

এদিকে এসব ঘটনায় অসংখ্য যানবাহন বিকল হয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালিকরা। তবু এসব দুর্ঘটনা বন্ধে নেই কারও কোন উদ্যোগ।  

সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর পৌর এলাকার ধুনট মোড়ে খাদ্য গুদামের সামনে যাত্রীবাহী বাস ও ধানবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের সহকারী আব্দুল আজিত (২৫) নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন ১০জন।  

একইদিন ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মহিপুর দুগ্ধ গবাদি পশু ও প্রাণি উন্নয়ন খামারের সামনে মালবাহী ট্রাকের চাপায় একটি যাত্রীবাহী সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকসহ ছয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে তিনজন পরেরদিন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শেরপুর থানা, দমকল বাহিনী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৪ নভেম্বর ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের খেজুরতলা এলাকা দিয়ে রাস্তা পারাপারের সময় বকস মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ঘোলাগাড়ী খাসপাড়া গ্রামের হাসেন আলীর ছেলে।


২০ অক্টোবর ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মহিপুর বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের সঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ইদ্রিস আলী ওরফে ইদু (৫৫) নামে একজন মারা যান। এ ঘটনায় তিনজন আহত হন।

৩১ অক্টোবর ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা হাটখোলা এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জামাত আলী (৫২) নিহত হন।

৩ সেপ্টেম্বর পৌরশহরের কলেজরোড এলাকায় মালবাহী ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় সিএনজির আরও চার যাত্রী আহত হন।

৬ সেপ্টেম্বর একই এলাকার মাজারগেট এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় খলিলুর রহমান (৬০) নামে একজন রিকশা চালক নিহত হন। নিহত খলিলুরের বাড়ি উপজেলার খন্দাকারটোলা গ্রামে।

১৬ সেপ্টেম্বর শেরপুরে খড়বোঝাই একটি চলন্ত ট্রাক থেকে পড়ে গিয়ে আহসান মিয়া (৫৩) নামে এক ব্যক্তি মারা যান। নিহত আহসান মিয়ার বাড়ি পাবনার শাহজাদপুর উপজেলার বাতিয়া গ্রামে।

৬ আগস্ট ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের থানা রোডের সামনে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালক শাহিন মিয়া (২২) নিহত হন। এ ঘটনায় শিশুসহ ১২জন আহত হন।

২০ আগস্ট ধনকুণ্ডি এলাকায় একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের একটি বাসের সংঘর্ষে দৈনিক ইত্তেফাকের পাবনার ফরিদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আবু বকর সিদ্দিক নিহত হন। এ ঘটনায় একই পত্রিকার আরও চারজন সাংবাদিক আহত হন।  

১৩ জুন শেরপুরের ধুনট মোড় খাদ্যগুদামের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে অজ্ঞাত নামা এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় ওই বাসের ৩০জন যাত্রী আহত হন।  

২৩ মে বগুড়া শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেলোয়ার হোসেন (৫৮) নামে একজন শিক্ষক নিহত হন। তিনি জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার উত্তরহাট শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন।

৮ এপ্রিল উপজেলার ধর্মকাম এলাকায় দু’টি মালবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও চালকের সহকারীসহ পাঁচজন আহত হন।

১১ এপ্রিল ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের উপজেলার আমবাগান এলাকা একটি যাত্রীবাহী বাসের ছাদ থেকে পড়ে আব্দুল মোমেন (২৬) নামে এক গার্মেন্টকর্মী নিহত হন। রংপুরের পীরগাছা দাদল গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মোমেন।  

২৪ এপ্রিল উপজেলার বিরইল এলাকায় দু’টি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১২ জন যাত্রী আহত হয়েছেন।

২৮ এপ্রিল উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে খাদে পড়ে গোলাপ হোসেন (৪৮) নামে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। নিহত গাবতলী উপজেলার কালাইহাটা গ্রামের মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় আরও ১৫ জন যাত্রী আহত হন।

২১ মার্চ উপজেলার সীমাবাড়ী ইউনিয়নের ধনকুণ্ডি এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় বাসের ১০জন যাত্রী আহত হন।

১৪ মার্চ ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মির্জাপুর বাজার এলাকায় মালবাহী একটি ট্রাকের ধাক্কায় খবর আলী (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা যান।

২০ জানুয়ারি উপজেলার ছোনকা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে বাসের হেলপার নিহত হন। নিহত হেলপার আরিফুল ইসলাম উপজেলার সাধুবাড়ি গ্রামের মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় অন্তত ২৫জন যাত্রী আহত হন।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম সরোয়ার জাহান বাংলানিউজকে জানান, ফিটনেস বিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। মহাসড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এছাড়া মহাসড়কে যাতে কোন ধরনের হাটবাজার বসতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান সরোয়ার জাহান।

পাশপাশি জনগণকে সচেতনভাবে রাস্তায় চলাচলের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ হাশমী বাংলানিউজকে জানান, পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাধ্য অনুযায়ী দুর্ঘটনা রোধে কাজ করে যাচ্ছে। নিয়মিত যানবাহন চেকিং করা হচ্ছে। ফিটনেসবিহীন গাড়িসহ বিভিন্ন ক্রুটির কারণে মামলাও দেওয়া হচ্ছে।

তবে দুর্ঘটনা রোধের প্রথম কাজটি মালিকদের করতে হবে। যেন তেন চালকের হাতে গাড়ির চাবি না দিয়ে প্রশিক্ষিত চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিতে হবে। এছাড়া জনগণকেও সতর্ক হয়ে রাস্তায় পা বাড়াতে হবে। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম আরো জোরালো করতে হবে বলেও মনে করেন এই পুলিশ কমকর্তা।    

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।