ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারছেন কেন?

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৫
পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারছেন কেন? ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মৌমিতার (ছদ্মনাম) সবে ৬ বছর বয়স। বছর খানেক আগে শুরু হয়েছে তার শিক্ষা জীবন।

যে সময়ে নতুন বই হাতে প্রফুল্ল মন নিয়ে তার স্কুলে ছুটে যাওয়ার কথা, সেই সময় ঘরে বসে তাকে টিভিতে দেখতে হচ্ছে রাজনৈতিক হানাহানির বিভৎস দৃশ্য।
 
হিংসা, বিরোধ, সংঘর্ষ, হানাহানি কী- এখনো পুরোপুরি বুঝে ওঠার বয়স হয়নি মৌমিতার। অথচ হিংসার রাজনীতির কারণে তার মতো শিশুকেও বলি হতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই তার বাবা-মা তাকে ঘরের বাইরে বের হতে দিচ্ছেন না।  
 
এ শুধু মৌমিতার একার গল্প না। দেশের লাখ লাখ শিশু বর্তমানে এমন পরিস্থিতিতে রয়েছে। ঘরের বাইরে গেলেই শঙ্কা- কখন না জানি নাশকতার শিকার হতে হয়। কারণ দেশ জুড়ে হরতাল-অবরোধের নামে চলা পেট্রোল বোমা হামলায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন বৃদ্ধ, যুবক, শিশুসহ সাধারণ মানুষ।
 
ফলে একদিকে শিশু মৌমিতাদের স্কুল ছেড়ে ঘরে আবদ্ধ জীবন কাটাতে হচ্ছে, অন্যদিকে পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের।
 
ইতিমধ্যে দুই দফা পিছিয়ে গেছে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা। তৃতীয় দফায় নির্ধারণ করা সময়সূচি অনুযায়ী এ পরীক্ষা শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিনও পরীক্ষা হবে কি-না, সে অনিশ্চয়তা কাটছে না শিক্ষার্থীদের। ফলে হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে শিক্ষার্থীরা।
 
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) শত শত শিক্ষার্থী বাড্ডা লিংক রোড থেকে মালিবাগ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
 
মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষা হরতাল-অবরোধমুক্ত রাখার দাবি জানায়। শিক্ষক-অবিভাবকরাও তাদের সঙ্গে একত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকেও মানববন্ধনে অংশ নিতে দেখা যায়।  
 
আমরা শিশু, গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে আমাদেরও পুড়িয়ে মারছেন কেন?, আমাদের অপরাধ?- গলায় এমন প্রতিবাদী ব্যানার ঝুলিয়ে একটি শিশুকে এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
 
কোয়ালিটি লারনার্স হাই স্কুলের শিক্ষার্থী ওই শিশু বাংলানিউজকে বলেছে, আমার মতো শিশুকে পেট্রোল বোমা মেরে পুড়িযে মারা হচ্ছে। আমরাতো কোনো অপরাধ করিনি। আমরাতো কারও সঙ্গে ঝগড়া করিনি। আমরাতো কাউকে বকা দেইনি। তাহলে আমাদের মারা হচ্ছে কেন?
 
পেট্রোল বোমা কী- তুমি জানো? এমন প্রশ্নে শিশুটির উত্তর, না। তবে শুনেছি এই বোমাতে আগুন ধরে যায়। আর সেই আগুনে মানুষ পুড়ে মারা যায়। আমার মতো শিশুরাও সেই আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে।
 
রামপুরা বিটিভি ভবনের সামনের মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমি আক্তারের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। সুমি বলেন, বার বার পরীক্ষা পেছালে পড়ার মনোযোগ নষ্ট হয়। এভাবে কখনো ভালো পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব না। যারা রাজনীতি করেন তাদেরওতো ছেলে-মেয়ে আছে? রাজনীতিবিদের কাছে অনুরোধ আমাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিন।
 
৬ বছরের মেয়ে আয়শাকে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন আশিকুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবে গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারা হচ্ছে, তা থেকে বৃদ্ধ, শিশু কেউ রক্ষা পাচ্ছেন না। এক কথায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
 
আশিকুর বলেন, এ বছর আয়শা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে। বছরের শুরুতে নতুন বই পেয়েছে। নতুন বই পেয়ে সে খুব আনন্দ করেছে। কিন্তু এই নতুন বই নিয়ে তার আর ক্লাসে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমি আয়শাকে স্কুলে পাঠাতে সাহস পাই না। এমনকি গত একমাসে ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতেও যাওয়া হয়নি। এতে ওর উপর এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে জানি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কী করতে  পারি? 
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।