ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতে জোটের টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা, সহিংসতা ও নাশকতায় ক্ষুব্ধ প্রতিবাদী মানুষ রাস্তায় নেমে আসছেন। নাশকতার ঘটনা অব্যাহত থাকায় তীব্র হচ্ছে প্রতিবাদ।
পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা এবং নাশকতা, সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে প্রতিদিনই রাজপথে নামছেন। এ সহিংসতা বন্ধে ব্যবসায়ীদেরও রাস্তায় নামার আহবান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
রাজধানীর শাহবাগ প্রজন্ম চত্ত্বরে টানা অবস্থান নিয়েছে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদী সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চ।
চলমান নাশকতার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী জুড়ে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এসব কর্মসূচিতে প্রতিবাদের নগরীতে পরিণত হয় রাজধানী ঢাকা।
এদিকে নাশকতা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সারা দেশের মানুষকে সংগঠিত করে রাস্তায় নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দলীয় সংসদ সদস্যদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত রোববার (১ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সংগঠিত করে সহিংসতার বিরুদ্ধে রাখে দাঁড়াতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। এমপিরা যাতে নিজ নিজ এলাকার মানুষকে সংগঠিত করে এ সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন, সেজন্য জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশন কয়েক দিনের জন্য মুলতবি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। আগামী মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আবার সংসদের অধিবেশন বসবে।
শুক্রবার (৬ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা আহবান করা হয়েছে। এ সভায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও দিক-নির্দেশনা আসতে পারে বলে জানা গেছে।
গত এক মাস ধরে চলে আসা বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমা হামলা ও নাশকতায় এ পর্যন্ত ৫৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। এই সহিংসতার প্রতিবাদ ও বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে প্রতিনিয়তই মানুষ রাস্তায় নামতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্ত্বরে লাগাতার অবস্থান নিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধ করার দাবিতে সকাল ১০টায় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীসহ, ছাত্র, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী-সমর্থক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সেখানে সমবেত হচ্ছেন। হরতাল অবরোধের নামে নাশকতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সালে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হন। গণজাগরণ মঞ্জের প্রতিবাদী কণ্ঠ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগের মতো সারা দেশে জেলা-উপজেলায় ছাত্র-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রাস্তায় নামে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়কে মানববন্ধন করে ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ। সকাল ১১টা থেকে চলমান সহিংসতা বন্ধে ‘সংঘাত নয় শান্তি চাই’- এই স্লোগানে সাদা পতাকা হাতে রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান হাজার হাজার মানুষ।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে সকাল ১১টায় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকে রাজনীতির মধ্যে না রাখার দাবি জানিয়ে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করেন। খালেদা জিয়ার কাছে স্মারকলিপিও দেন তারা। দুপুরে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় মোটর শ্রমিকরা কাফনের কাপড় পরে অবস্থান করেন। এ সময় তারা হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এছাড়া প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে অবরোধ-হরতালের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ করছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করে। দিলকুশার বক চত্ত্বরে জাতীয় শ্রমিক লীগ, বায়তুল মোকারমের দক্ষিণ গেটে সম্মিলিত আওয়ামী সমর্থক জোট বিক্ষোভ সমাবেশ করে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরে ব্যাংক শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন মানবন্ধন ও সমাবেশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
অবরোধ-হরতাল নাশকতার প্রতিবাদে মিরপুর ১০ নম্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানবন্ধন করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
সকাল সাড়ে ১১টায় জিপিও’র উল্টা পাশে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
দুপুরে সচিবালয়ের সামনে হর্ন বাজিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এ কর্মসূচিতে মন্ত্রীরাও অংশ নেন। আব্দুল গণি রোডে রেল ভবনের সামনে মানবন্ধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিএনপি-জামায়াত জোটের এ টানা হরতাল-অবরোধ বন্ধের দাবিতে আগামী রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) মাঠে নামছেন ব্যবসায়ীরা। ‘দেশ বাঁচাও, অর্থনীতি বাঁচাও, আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধ কর’ স্লোগান নিয়ে এফবিসিসিআই সারাদেশের ব্যবসায়ীদের রাস্তায় নামার আহবান জানিয়েছে।
শুক্রবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীতে পিস র্যালি (শান্তি মিছিল) করবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমবেত হয়ে এ র্যালি বের করা হবে।
ক্ষমতাসীন ১৪ দলও অবরোধ-হরতালের প্রতিবাদে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে। আগামী শনিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল মারার ঘটনাস্থলে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে জোটটি। এ সমাবেশে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। চৌদ্দগ্রামে পেট্রোল বোমায় ৮ জন দগ্ধ হয়ে নিহত হন।
এর পরদিন রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীসহ সারাদেশে শান্তি ও গণতন্ত্রের স্বপক্ষে মানববন্ধন করবে ১৪ দল। বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শান্তির সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১৪ দল ঘোষিত এসব কর্মসূচি সফল করতে শুক্রবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মুক্তিযোদ্ধা, নারী সংগঠন, আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হবে।
এছাড়া ১৪ দলের শরিক জাসদ ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস পালন করবে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ওয়াকার্স পার্টি সমাবেশ করবে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুরূপ সমাবেশ করবে সাম্যবাদী দল। ঢাকাসহ সারাদেশে এসব কর্মসূচি পালিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫,২০১৫