শাহবাগ, চারুকলা, টিএসসি এলাকা থেকে: চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়-ভীতিকে পাশ কাটিয়ে অমর একুশে বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা এবং শাহবাগ এলাকা মেতেছে বসন্ত বরণে। নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোররা মাতোয়ারা আজ বাসন্তি উচ্ছ্বাসে-আনন্দে।
বাহারি পোশাকে সেজে শিশু-কিশোর, যুগল তরুণ-তরুণীদের সমাগম শুরু হয় ভোর থেকেই। পরিবার-পরিজনদের নিয়ে দল বেধে আসেন কেউ কেউ। সবারই গন্তব্য প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলা।
শুক্রবার (১৩ ফ্রেব্রুয়ারি) সকাল ৭টা থেকে যন্ত্রসঙ্গীতের মূর্ছনায় শুরু হয় বকুল তলার বসন্তবরণ। তারুণ্য, নতুন এবং চির সুন্দরের আহ্বানে ফাগুনের প্রথম প্রহরে বসন্ত বন্দনা, বসন্ত কথন, ফুলের প্রীতি বন্ধনী বিনিময়, আবির বিনিময়, বসন্ত আড্ডায় বরণ করে নেওয়া হয় ঋতুরাজ বসন্তকে।
বরাবরের মতো এবারও জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজন করেছে ‘বসন্ত বরণ উৎসব-১৪২১’।
বেলা ১১টার দিকে বকুল তলা প্রাঙ্গনে বের হয় শোভাযাত্রা। কী আনন্দ আকাশে বাতাসে গান পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় এ শোভাযাত্রা।
এরপর ফের শুরু হয় দেশের গুণী শিল্পীদের গান, কবিতাসহ নানা আয়োজন। বাংলার সংস্কৃতির সবকিছু ফুঠে ওঠে এসব পরিবেশনায়। বয়স, শ্রেণি, পেশা সব কিছু দূরে ঠেলে দিয়ে সবাই যেন এক মঞ্চে। এমনই এক পরিবেশে শেষ হয় প্রথম পর্বের বসন্ত বরণ উৎসব।
আয়োজকদের সূচি অনুসারে চরুকলায় প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এছাড়াও রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক, লক্ষ্মীবাজার, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ এবং উত্তরার ৩ নং সেক্টরের উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত বরণের নানা আয়োজন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান চলবে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
ফুলের দোকানে ভিড় কম: বসন্তের প্রথম প্রহর। গন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলার বকুল তলা। তবে এ গন্তব্যে পৌঁছার আগে প্রথমে সবাই ঢু মারেন শাহবাগ মোড়ের ফুলের দোকানগুলোতে।
ফুলের সাজে নিজেকে সাজিয়ে চলে যান বকুলতলায়। বিভিন্ন ফুলের পসরা সাজিয়ে দোকানিদের প্রস্তুতিতেও কোনো ঘাটতি থাকে না। ফুলের এসব দোকানেও থাকে উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু এবার যেন একটু ব্যতিক্রমই দেখা গেলো ফুলের দোকানগুলোর দৃশ্য। গত বছরের তুলনায় ভিড় অনেকটাই কম ছিল।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফুল বিক্রেতা ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবার ক্রেতাদের সংখ্যা কম। গত বছর এ সময়ে ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন ভিড় হয়নি। ’ তবে বিকেল হলেও ক্রেতাদের আগমন আরও হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই বিক্রেতা।
বিভিন্ন ফুলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, আকার ও মানভেদে প্রতিটি জারবারা ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, গেলোডিয়াস ১৫ থেকে ২০ টাকা, গোলাপ ১৫ থেকে ২০ টাকা, রজনীগন্ধা ২০ থেকে ২৫ টাকা, ক্যাফেরোজ ৯০ থেকে ১১০ টাকা, গাঁদা ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া গাঁদা, গেলোডিয়াস ও রজনীগন্ধ ফুল দিয়ে ফুলের রিং তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। আর বেলী ফুলের মালা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। শাহবাগ থেকে একেবারে বইমেলা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে আলতা-চুড়ি, আর ফুলের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকনীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫
** আজ শুধু ফুল ফোটানোর দিন!
** আহা আজি বসন্তে...’
** ফাগুন এলো কার লিপি হাতে...
** স্বাগতম হে ঋতুরাজ বসন্ত