ঢাকা: ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হয়ে গেছে দেড়বছর আগে। তাতে কী হয়েছে! তিল তিল করে গড়ে তোলা ভালোবাসার স্তূপ তো রয়েই গেছে হৃদয়ের গোপন কোঠরে।
তাই, প্রতি বছরের মতো এবারও সেই স্বপ্নকন্যার জন্য কিনেছি, একটি লাল গোলাপ। এভাবেই নিজের ভালোবাসার কথা বাংলানিউজকে জানালেন শ্রাবণ।
শ্রাবণ বলেন, জানি, ওকে দিতে পারবো না। তবু কিনেছি স্বপ্নকন্যার জন্য। প্রতি বছরই কিনবো।
তিনি বলেন, ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল বছর ছয়েক আগে। কিছুদিনের মধ্যে এ পরিচয় রূপ নেয় ভালোবাসায়। সেই থেকে শ্রাবণ ভালোবেসে তাকে ডাকেন ‘স্বপ্নকন্যা’ বলে।
মান-অভিমান আর হাসি-আনন্দে তাদের সম্পর্ক টিকে ছিল পাঁচ বছর। ওই পাঁচ বছরে ‘স্বপ্নকন্যা’র সঙ্গে শ্রাবণের দেখা হয়েছে মাত্র তিনবার। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে দুজনের কথা হতো প্রতিদিন।
‘স্বপ্নকন্যারা’ বোধহয় শুধু স্বপ্নেই আসে; বাস্তবে নয়। তাইতো, পাঁচ বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে শ্রাবণের ‘স্বপ্নকন্যা’ বছর দেড়েক আগে বিয়ে করে তার এক আত্মীয়কে। বিয়ের পর তাদের কথা হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির পর আর কোনো কথা হয়নি- জানালেন শ্রাবণ।
শ্রাবণ প্রতিদিন ভাবেন, ‘স্বপ্নকন্যা’কে ফোন দেবেন। কিন্তু দিতে পারেন না। হয়ত অভিমান। দেখা নেই, কথা নেই, তবু স্বপ্নকন্যাকে ভুলতে পারছেন না তিনি।
পরিচয়ের পর থেকেই প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘স্বপ্নকন্যা’র জন্য লাল গোলাপ কেনেন শ্রাবণ। এবারও কিনেছেন একটি লাল গোলাপ।
নিজের ভালোবাসার মানুষ সম্পর্কে শ্রাবণ বলেন, ‘স্বপ্নকন্যা’র বিয়ের আগে প্রতিদিন ওর সঙ্গে কথা হতো। কিন্তু, বিয়ের পর থেকে আর কথা হয়নি। গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওকে ফোন দিয়েছিলাম। কথা বলিনি। তবুও বুঝে ফেলেছিল। ফোনের ওপার থেকে শুনেছি কান্নার আওয়াজ। আওয়াজ শুনে মনে হলো, অঝরে কাঁদছে সে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে ফোনলাইন কেটে দিই। এরপর আর ফোন দিইনি।
শ্রাবণ বলেন, ‘স্বপ্নকন্যা’ খুব ভালো মেয়ে। নিজের চেয়েও পরিবারকে বেশি ভালোবাসেন। পরিবারের সম্মান রাখতে তার আত্মীয়কে বিয়ে করেছেন। স্বপ্ন কন্যার সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই তারপরও আজও তাকেই ভালোবাসেন।
শ্রাবণের ভাষায়, ‘ভালোবাসবো। প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ওর জন্য একটি করে লাল গোলাপ কিনবো। ’
খুঁজলে শ্রাবণের মতো এমন ভালোবাসার প্রমাণ হয়ত আরো পাওয়া যাবে। আবার এমন অনেকে আছেন যারা মনে মনে কোনো বিশেষ একজনকে ভালোবাসেন। কিন্তু, সাহস করে বলতে পারেন না। প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি আসে, আবার চলেও যায়। কিন্তু, ভালোবাসার মানুষকে আর গোলাপ দেওয়া হয় না!
আবার অনেকে এই দিনটার (১৪ ফেব্রুয়ারি) অপেক্ষায় থাকেন। উপলক্ষ পেয়ে প্রেয়সীকে বলবেন নিজের মনের কথা। শুরু হবে, জীবনের নতুন অধ্যায়।
রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের গলিতে-গলিতে এমন রোমান্টিক ছেলেমেয়েদের জন্য ‘লাল গোলাপ’-এর পসরা সাজিয়ে মাত্র একদিনের জন্য বসেছেন অসংখ্য ফুল বিক্রেতা।
এসব ফুলের দোকান ও ফুলের দোকানের সামনের ভিড় দেখলে সহজেই বোঝা যায়, আজ কোনো বিশেষ দিন। বছর ধরেই এ দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন অসংখ্য রোমান্টিক মন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বোমা হামলা, আগুন কোনো কিছুই দমাতে পারেনা তাদের।
হাতিরঝিলে ফুল হাতে ঘুরতে আসা সায়মা বাংলানিউজকে বলেন, ইয়ামিনের (ভালোবাসার মানুষ) সঙ্গে ফোনে পরিচয়। প্রায় তিন মাস নিয়মিত কথা হয়। কিন্তু ইয়ামিনকে আজও দেখিনি। ও আমাকেও দেখেনি। আমরা দুজনে প্রথম দেখা করতে আজকের দিনটা বেছে নিয়েছি। ও দেখতে যেমনই হোক, আমি ওকেই ভালোবাসি। গোলাপটা কিনেছি, শুধু ওর জন্যই!
রমনা পার্কে কথা হয় বীথি ও রুমেলের সঙ্গে। দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রায় এক বছর ধরে তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করেন। তবে তাদের পরিচয় হওয়ার পর আজই প্রথম দেখা ১৪ ফেব্রুয়ারিতে (ভ্যালেনটাইসন ডে)।
দুজনেই জানান, সকাল থেকেই তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। প্রথমে সকাল ৮টায় টিএসসিতে দুজন এক সঙ্গে হয়েছেন। টিএসসি থেকে যান জাতীয় সংসদ ভবনে। এরপর এসেছেন রমনা পার্কে। সন্ধ্যার আগে যাবেন হাতিরঝিলে।
রামপুরার জাকের গলিতে ‘লাল গোলাপ’ বিক্রেতা আরিফুল বলেন, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দোকান দিয়েছি। সবাই ‘লাল গোলাপ’ কিনছে। অনেকে একা আসছেন। আবার জোড়া বেঁধেও অনেকে আসছেন ফুল কিনতে।
দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর জেলেপাড়ার মন্দিরের গলিতে সকাল ৭টা থেকে ফুলের পসরা সাজিয়েছেন আমিনুল। ফুল বিক্রি করে সকাল ১১টার মধ্যে হাজার টাকার ওপরে লাভ হয়েছে তার।
বনানীতে গোলাপের পসরা সাজিয়েছেন আলামিন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার কাছ থেকে গোলাপ কিনছেন। গোলাপ বিক্রি করে দুপুর ২টার মধ্যে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫