ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জাল রুপি পাচার

সীমান্ত পারাপারে জেএমবি!

ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫
সীমান্ত পারাপারে জেএমবি!

ঢাকা: হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত আট মাসে প্রায় ১০ কোটি জাল ভারতীয় রুপি জব্দ করেছে কাস্টমস ও কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ। এর মধ্যে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই তিন কোটির রুপির ওপরে জব্দ হয়েছে।



এ সব ঘটনায় পাকিস্তানি নাগরিক (বাহক) আটক হলেও নেপথ্যের গড ফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন।
 
হঠাৎ করে জাল রুপি আসার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রটি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সুযোগ নিচ্ছে কিনা সেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আর এই জাল রুপির গন্তব্য ভারত হলেও রুট হিসেবে যে, বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি পরিস্কার। ভারতে গিয়ে সেগুলো জঙ্গিদের কাছে যাচ্ছে এমন ধরনের তথ্যও রয়েছে।
 
ঢাকা কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১০ কোটি জাল রুপি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সব ঘটনায় পাকিস্তানি নাগরিক (বাহক) ১০ জনকে আটক করে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করে মামলা দায়ের হয়েছে। এর ২০১৪ সালের মধ্যে জুলাই মাসে ৫০ লাখ ২ হাজার ৬৩০, আগস্ট মাসে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৪ হাজার, সেপ্টেম্বর মাসে ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার, অক্টোবর মাসে ২ কোটি ৭৯ লাখ, নভেম্বর মাসে ২ কোটি ৯৫ লাখ, জানুয়ারি ও চলতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ভারতীয় জাল রুপি জব্দের ঘটনা ঘটে।

তবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জাল রুপি জব্দের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
 
বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার কাজী মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয় সব রুপি জব্দ করা হয়েছে, পাকিস্তানের করাচি থেকে আসা ফ্লাইট থেকে।
 
আপাতদৃষ্টিতে ভারতীয় রুপিগুলো আসল মনে হলেও পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সেগুলো জাল বলে প্রমাণিত হয়।
 
তিনি বলেন, ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যেই এক শ্রেণির আন্তর্জাতিক জাল-নোট তৈরি চক্রই এ কাজ করছে। ভারতীয় জাল রুপিসহ যারা আটক হচ্ছেন, তারা মূলত বাহক। কিন্তু যারা গডফাদার তারা পাকিস্তানে থাকার কারণে এখন পর্যন্ত তাদের আটক করা যায়নি।
 
ভারতে পাচারের উদ্দেশ্য ‌শাহজালালকে রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  
 
এক প্রশ্নের জবাবে কাজী মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন বলেন, জাল রুপি ভারতের জঙ্গিদের কাছে যায়, এমন ধরনের তথ্য রয়েছে। কিন্তু, কার মাধ্যমে কীভাবে যায়, সেটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ভালো বলতে পারবেন।
 
এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহআলম বাংলানিউজকে বলেন, কাস্টমস জাল নোটসহ বাহককে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। আমরা পরবর্তীতে সেটি তদন্ত করি।
 
তিনি বলেন, তদন্তে বাহকেরা যাদের নাম প্রকাশ করেন, তারা পাকিস্তানে থাকেন। এ কারণে আমরা শুধুমাত্র বাহকের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দাখিল করে থাকি।  

তিনি বলেন, যাদের আটক করা হয়, তারা একেবারে নিরক্ষর। অনেক সময় তারা নিজেদের নাম পর্যন্ত লিখতে পারেন না।

তিনি বলেন, জাল রুপিগুলো বাংলাদেশে কাদের মাধ্যমে ভারতের জঙ্গিদের কাছে যায়, সেই বিষয়গুলো আমরা এখনো উদঘাটন করতে পারেনি। কারণ, বাহকরা যাদের নাম বলেন,  তারা পাকিস্তানে থাকেন।
 
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার তানজিনা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, চক্রটি দুটি উদ্দেশ্যে জাল রুপি ভারতে পাচার করতে পারে। এক হলো, রাতারাতি বড় লোক হওয়া; আরেকটি হলো, জঙ্গিদের কাছে অর্থ যোগানো।

তিনি বলেন, এ ঘটনা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। শুধুমাত্র বাহক আটক হওয়াতে মামলা শেষ হওয়ার কারণে এর পেছনে বা নেপথ্যে কারা রয়েছেন, তা উদঘাটিত হচ্ছে না।
 
তানজিনা আক্তার বলেন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগের মাধ্যমে তদন্তের স্বার্থে পাকিস্তানে গিয়ে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিষয়গুলো শেয়ার করে নেপথ্যের নায়কদের আইনের আওতায় আনা যেতে পারে।
 
এদিকে, গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিভিন্ন আঞ্চলিক জঙ্গি সংগঠন ভারতে আন্তঃদেশীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এই নেটওয়ার্ক (এলইটি) গড়ে তোলার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। আঞ্চলিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে।

সূত্র জানায়, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এরই মধ্যে সমন্বিতভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
 
সূত্র জানায়, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলছে দেশের জঙ্গিরা। এলইটি এ কাজে স্থানীয় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে সহযোগিতা এবং উস্কানি দিচ্ছে। মূলত, ভারতে অবস্থানরত জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সহায়তার জন্য করাচি থেকে বিমান করে ঢাকায় আনা হয় জাল রুপি।

পরে জেএমবি সদস্যদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।