ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

টঙ্গিবাড়ীতে দেড় হাজার বছরের বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫
টঙ্গিবাড়ীতে দেড় হাজার বছরের বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের নাটেশ্বর গ্রামে দেড় হাজার বছর আগের একটি বৌদ্ধনগরী আবিষ্কৃত হয়েছে।

সোমবার বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাচীন এ বৌদ্ধনগরী আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’র সভাপতি ও প্রকল্প পরিচালক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন।



সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী ও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মিস্টার মা মিংকিয়াং।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা প্রকল্পের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনের জানানো হয়, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের নাটেশ্বর গ্রামে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত হয় মন্দির ও স্তূপ স্থাপত্যের অংশবিশেষ। পরে ২০১৫ সালে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হয় চীনের সাংস্কৃতিক স্মারক ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ইউনান প্রাদেশিক ইনস্টিটিউট। প্রায় ২ মাস খননকাজের পর নাটেশ্বর দেউল এ আবিষ্কৃত হয় অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের অবশিষ্ট অসাধারণ বাহু, কোণ এবং অভ্যন্তরীণ অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, প্রকোষ্ঠ ও মণ্ডপ প্রভৃতি।

এছ‍াড়া এখানে সদ্য আবিষ্কৃত প্রায় ৪ মিটার প্রশস্ত সীমানা প্রাচীর বিশিষ্ট দুই জোড়া চতুর্স্তূপ বাংলাদেশের স্তূপের ইতিহাসে অভিনব সংযোজন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, আর্দ্রতারোধক হিসেবে ভিত্তি দেয়ালে ঝামা ইটের ব্যবহার, ৪টি স্তূপের স্থানিক পরিমিতি, বর্গাকৃতি ভারসাম্য, দেয়ালের অপ্রচলিত নজিরবিহীন কাঠামো প্রভৃতি বাংলাদেশের প্রাচীন উন্নত স্থাপত্যের ইতিহাসের একটি নতুন সংযোজন। প্রায় এক হাজার বছরের প্রাচীন ইটনির্মিত দুটি পাকা রাস্তার আবিষ্কারের মাধ্যমে তৎকালীন সড়কনির্মাণ কৌশল, বসতি পরিকল্পনা ও বিন্যাসের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে।

এছাড়া দেউল এর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে আবিষ্কৃত হচ্ছে ইট নির্মিত ২ দশমিক ৭৫ মিটার প্রশস্ত আকাঁবাকাঁ একটি বিশেষ দেয়াল।

আরো বলা হয়, নাটেশ্বরের প্রত্নস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে প্রায় ৭ মিটার গভীরতায় প্রাপ্ত ৫টি নির্মাণযুগের প্রত্ন-নিদর্শন রয়েছে, যা বিক্রমপুর অঞ্চলে দীর্ঘ সময়ব্যাপী এক সমৃদ্ধ সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করে।

বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন তার বক্তব্যে বলেন, এ খননকাজ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত অসাধারণ মন্দির ও স্থাপত্য বাংলাদেশের কোথাও নেই। এর নির্মাণশৈলী শুধু বাংলাদেশের নয়, মানবজাতির ইতিহাসে বিশ্বের ঐতিহ্যের অংশ হবে। এক সময় ইউনেস্কো এই প্রাচীন নিদর্শনকে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করবে। এটা প্রত্নতাত্ত্বিক পার্কে রূপ নিবে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা বিক্রমপুরের এই নাটেশ্বর গ্রামে আসবে। এ স্থাপত্য নাটেশ্বরকে বিশ্বের দরবারে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।