ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

তিস্তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি, সমাধান হবে

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫
তিস্তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি, সমাধান হবে মমতা ব্যানার্জি

ঢাকা: তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি উল্লেখ করে এ সমস্যার সমাধান হবে  বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

শনিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠানে আবারও তিস্তা জট সমাধানের ইঙ্গিত দেন তিনি।



ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (আইবিসিসিআই), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ড্রাসট্রিজ (এফবিসিসিআই) ও ইন্ডিয়া চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) যৌথভাবে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের নিয়ে এ বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মমতা ব্যানার্জি বলেন, তিস্তা বিষয়ে হাসিনাদির (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সমাধান হবে ইনশাল্লাহ!
মমতা বলেন, স্থল সীমানা চুক্তিটি করেই দিয়েছি। এটারও সমাধান হবে।

মমতা ব্যানার্জি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি এবং দেশটির স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি। এটি আমাদেরও দেশ। অতএব পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে যথাশিগগির সম্ভব আমরা তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবো।

তিনি বলেন, প্রথমে আমি আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। সেটা তো গ্রহণ করুন। মতবিনিময় শুরু করেছি যখন, তখন কঠিন কাজও সহজ হয়ে যাবে।  

তিনি বলেন, যদি বোন হিসেবেই গ্রহণ করেন, তাহলে কিসের দেনা, কিসের পাওনা? আপনি আমার কাছে সব চাইতে পারেন, আমি আপনাদের সব দিতে পারি। আবার আমিও আপনার কাছে সব চাইতে পারি, আপনিও সব দিতে পারেন। একটি জিনিসের মধ্যে সীমা বন্ধ করবেন না। এর চেয়ে অনেক বেশি চাওয়ার আছে উভয়ের কাছে।

আবারও তিস্তা বিষয়ে আস্থা রাখার আহবান জানিয়ে মমতা বলেন, তিস্তার বিষয়ে আস্থা রাখুন। আপনাদের কিছু সমস্যা আছে। আমাদেরও কিছু সমস্যা আছে। আমরা আলোচনা শুরু করেছি।

বাংলাদেশের পানির চাহিদা তার অজানা নয় উল্লেখ করে মমতা বলেন, আমি বুঝি আপনাদেরও জল চাই। কিন্তু জলটা তৈরি না হলে আসবে কোথা থেকে?
স্থলসীমা চুক্তির তো সমাধান হয়ে গেছে। কতোদিন পর এটা পেলেন।   এটা একটা বড় সমস্যা ছিল। আরেকটার কথা শুরু করেছি। একের পথ ধরে দু’দেশের সকল সমস্যা মিটে যাবে। বাংলা (পশ্চিম বাংলা) ও বাংলাদেশ দু’টোই যেন ভালো থাকে সেভাবেই আমরা চলবো।
 
মমতা দু’দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্কের প্রসঙ্গ নিয়ে বলেন, বাংলাদেশ কলকাতা ব্যবসায়িক গেটওয়ে। এ সম্পর্ক এতোটাই ভালো, যেটি নাড়াচাড়া করা এখনই প্রয়োজন বলে মনে করি।  

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী এবং  মুখ্যমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে আইসিসি  সভাপতি রুপেন রায়ের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি  ভারতীয় প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।

এতে দু’ দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়াতে আইবিসিসিআই এবং আইসিসি’র মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্মারক বিনিময় হয়। দুই দেশের ব্যবসায়ীরা দু’দেশের মধ্যকার ব্যবসায়িক বাধা শনাক্ত এবং দূরীকরণ বিষয়কে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।

এটিকে স্বাগত জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, আপনারা বসুন। কি সমস্যা চিহ্নিত করুন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আসুন যৌথ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল গঠন করি। তাদের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে আপনার যেখানে আটকাবে আমাকে জানাবেন। আমার যেখানে আটকাবে আপনাকে জানাবো।  

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যৌথ ইডাস্ট্রিয়াল পার্ক, যৌথ ব্যবসায়িক টেলিভিশন গঠনের প্রস্তাব দেন। ট্যুরিজম, শিপিং, ইনবাউন্ড ট্রান্সপোর্টসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি বলেন, দু’দেশের দু’টি পা জোড়া দিয়ে চলুন, কাজ করি।  

তিনি বলেন, সার্ক দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কারণ, এসব দেশে অনেক ব্যবসার সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, পদ্মা, মেঘনা, যমুনার যেমন ভাগ হয় না তেমনি মনেরও ভাগ করা যায় না। আসুন, যৌথ সংস্কৃতি উৎসব, যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্য করি।  
তিনি বলেন, ইন্দো-বাংলা যৌথ উদ্যোগে একটি ব্যবসায়িক টিভি চ্যানেল করুন। সেটাকে আমরা স্বাগত জানাবো।

মমতা ব্যানার্জি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি দু’টি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন ও বৈশাখি টেলিভিশন আমরা দেখতে পাই। অন্যরাও আসতে পারেন। আমি ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গেও কথা বলে জেনেছি, ভারতে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল প্রচারে কোন বাধা নেই।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মমতা জানান, বাংলাদেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি মহিলা শিল্পোদ্যক্তাদের জন্য কলকাতার যেকোনো মেলায় স্টল ভাড়া কমানো হবে।
অনুষ্ঠানে এক বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তার প্রস্তাবে তিনি কলকাতায় বাংলাদেশি বুটিকস হোটেল চালু করতে সম্মত হন।

অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই ঢাকা সফরে দু’দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হবে।   
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দু’দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে যাবে। আশা করছি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা তিস্তাসহ দু’দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত সকল ইস্যুগুলো সমাধানে আন্তরিকতার সঙ্গে ভূমিকা পালন করবেন।

তিনি আরো বলেন, ভারতের বাজারে তামাক এবং মাছ ছাড়া প্রায় সকল পণ্য বিনা শুল্কে প্রবেশ করতে পারে। তবে ট্যারিফ ও  নন ট্যারিফজনিত কিছু বাধা এখনও আছে। যা দূরীকরণে কাজ চলছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়।

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য পাওনা নিয়ে আন্তরিক এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে মমতা ব্যানার্জির প্রতি আহবানও জানান তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া সত্বেও অনেক অশুল্ক বাধা রয়েছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানের কথা বলেন তিনি।

তবে দু’দেশের বাণিজ্য বৈষম্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশই নিজের প্রয়োজনে ভারত থেকে বেশি পণ্য আমদানি করে।

ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে না ভেবে সমাধান নিয়ে ভাবার পরামর্শ দেন মমতা ব্যানার্জি। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা রফতানি ও আমদানি ভালো করে করুন। দুই দেশের ব্যবসায়ীরা মিলে-মিশে কাজ করুন। বাংলা ও বাংলাদেশ দুটোকেই আমার ভালো লাগে। সমস্যা নিয়ে ভাববেন না, সমাধান নিয়ে ভাবুন। সমাধান জানা থাকলে চেষ্টা করলে সমাধান পাওয়া যায়। দুটো দেশেরই সমস্যা দিয়ে পার হতে হয়, আবার সমাধানও করতে হয়। আমি আশাবাদী, আপনারা আশাবাদী তো?

বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পরিচর্যার প্রয়োজন। এজন্য যৌথ বিজনেস কমিটি এবং সেন্টার গঠন, একসঙ্গে শিল্প পার্ক স্থাপন ও সার্ক শিল্প পার্ক গঠনের পরামর্শও দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট কাজী আকরামউদ্দিন আহমেদ, আইসিসি’র প্রেসিডেন্ট রুপেন রায়, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের উপদেষ্টা এবং প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমেদ আইবিসিসি’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী বক্তৃতা দেন।

এফবিসিসিআই’র সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানবিক সম্পর্ক আছে। এখন ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়তে হবে। তবে দু’ দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্য বাড়ছে।   অশুল্ক বাধায় শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে আসছে না। বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মান যাচাইয়ে  বিএসটিআই’র সনদ আমলে নেওয়া হবে বলে ঘোষণা সত্বেও তা করা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ে গত শুক্রবার তিস্তায় মৌসুমের সবচেয়ে কম পানি পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ভারতীয় অংশে দুর্বল অবকাঠামোর কথা তুলে ধরেন তিনি। দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান চান তিনি।

আইসিসি’র সভাপতি রুপেন রায় বলেন, ভারতে বাংলাদেশের রফতানি যে হারে বাড়ার কথা ছিল অশুল্ক বাধায় তা হয়নি। এক্ষেত্রে বাধাগুলোর একটি তালিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এগুলো পরে সরকারের নজরে আনা হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ‘সার্ক পার্ক’প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রশ্নোত্তর পর্বে সীমান্তে গরু ব্যবসায়ীদের গুলি করে হত্যা না করারও অনুরোধ জানান বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য বাড়াতে ভারতীয় অংশে অবকাঠামো উন্নয়ন করছে ভারত। পেট্রাপল বন্দর সংস্কার শেষে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। তিন মাসের মধ্যে ফুলবাড়িয়া বন্দর উদ্বোধন হবে।

অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ীদের হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চোরাচালন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে এটা করা হয়। পর্যাপ্ত সীমান্ত হাট থাকা পর  এ ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসার আর প্রয়োজন নেই।

এ অনুষ্ঠান শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আয়োজিত চা-চক্রে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।