ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘পোলটি চালাইনা এ্যানো রিকসা চালাই’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫
‘পোলটি চালাইনা এ্যানো রিকসা চালাই’ হাবিবুর রহমান / ছবি: কাশেম হারুন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে ফিরে: গ্যাছে হরতালে তিন ব্যাস (দুই হাজার পোল্ট্রি মুরগি)লস খাইচি। এই হরতালেও দুই ব্যস লস খাইছি।

সুদ ও ব্যাংকের ঋণে সব কিছু শেষ করছি। এ্যানো পোলটি(পোল্ট্রি) চালাই না; এ্যানো পথে পথে রিকশা চালাই।
 
কথাগুলো বাংলানিউজের কাছে শেয়ার করছিলেন পোল্ট্রি ব্যবসায় সব হারিয়ে নিস্ব হয়ে পড়া পোল্ট্রি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। তিনি গাজীপুর, কাপাসিয়ার বরুণ গ্রামের আব্দুল মান্নানের বড় ছেলে।
 
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে কবলে পড়ে সব কিছু শেষ করেছেন তিনি। পোল্ট্রি খামার বাদ দিয়ে এখন পথে পথে রিকশা চালান হাবিবুর।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন শুরু ঠিক সেই মুহূর্তেই যেন বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে দুই চালানে প্রায় ৮০ হাজার টাকা লোকসানের শিকার হয়েছিলেন। সেই ক্ষতি পোষানোর জন্য নতুন করে পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু করেন। এবারও সেই একই রাজনৈতিক অস্থিরতা। এবারও হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি।
 
ব্যাংকঋণ, ঋণের সুদের কিস্তি পরিশোধ ও খামার তৈরির খরচা মিলিয়ে প্রায় চার লাখ টাকা ঋণ হয়েছে হাবিবুরের। খামারজুড়ে এখন শুধুই হাহাকার। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন সাড়ে চার থেকে পাঁচশ টাকা আয় হয়। এই দিয়ে কোনো রকম অভাবের সংসার চলে তার।
 
পোল্ট্রি খামারঘর তৈরি করেছিলেন ব্রাক ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে। বছর শেষে কিভাবে ৩০ হাজার টাকা সুদ দেবেন এই চিন্তায় দিশেহারা হাবিবুর।
 
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গ্যাছে হরতালে ৮০ হাজার লস খাইচি এবার খাইলাম দেড় লাখ। পোলটি ব্যবসায় পথে বসেছি। এনো পতে পতে(পথে) রিকশা চালাই। বিরাকের(ব্রাক ব্যাংক) সুদ নিয়া চিন্তায় আছি, তারা চাপ দেয়। ’

হাবিবুর রহমান ও সাহিদা খাতুন দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। অভাবের সংসার নিয়ে মহা চিন্তায় আছেন তারা। ছোট বাচ্চার জন্য এখন ঠিকমত দুধও কিনতে পারেন না তারা।

সাহিদা খাতুন বলেন, আল্লাহর মাল তিন জন দিচে। কিন্তু এখন লোকসানের পর লোকসান গুনতিছি। ব্যাংকের ঋণের সুদের কিস্তির চাপ বাড়ছে। বাচ্চাদের দুধ কিনতে পারি না। হরতালে সব কিছু শেষ করছে। ’
 
অপরদিকে হাবিবুর রহমান এখনও পোল্ট্রি ফিড ও ‍ওষুধের বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি। আড়তে প্রায় ৪০ হাজার টাকা দেনা। কাপাসিয়ায় শুধু হাবিবুর রহমান নন, তার মতো শতশত খামারিকে পথে বসিয়েছে হরতাল ও অবরোধ। অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।
 
হাবিবুর রহমানের মতো তাইজুল শেখও। পোল্ট্রি খামারিতে লোকসান গুনতে গুনতে আর কোনো উপায় না দেখে সপ্তাহ খানেক হলো কাপাসিয়া বাজারে চায়ের দোকান দিয়েছেন।

হরতাল-অবরোধে একদিকে যখন খামারিরা পথে বসেছেন অপরদিকে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে পোল্ট্রি ফিড ও ওষুধের আড়তে।

তাদের মধ্যে একজন মেসার্স ব্রাদার্স পোল্ট্রি ফিড আড়তের মালিক ইলিয়াস উদ্দিন মিঠু। খামারিদের বাকিতে খাদ্য ও ওষুধ দিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকার পোল্ট্রি ফিড ও  ওষুধ বিক্রি করতাম। এখন ১০ হাজার টাকারও বিক্রি হয় না।

খামারিদের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার পোল্ট্রি ফিড ও মেডিসিন বাকিতে দিয়েছি। তারা আমার সঙ্গে আর দেখা করে না। কোনো খামারিকে হয় তো চাপ দিলে তারা জমি রিহান (বন্ধক) দিয়ে টাকা পরিশোধ করে। রাজনীতিবিদেরা মারামারি করে আর খেসারত দিতে হয় খামারিদের। আমাদের কথা চিন্তা করে হলেও তারা যেন হানাহানি বন্ধ করে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।