ঢাকা: আগুণে দগ্ধ হওয়ার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা রোগীদের জন্য গোল্ডেন আওয়ার। এ সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে শতকরা ৮০ ভাগ দগ্ধ বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
কিন্তু বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে গোল্ডেন আওয়ারে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছরই বাড়ছে আগুণে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অবৈতনিক উপদেষ্টা ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলানিউজ টিমের সাথে আলাপকালে বলেন, আমাদের দেশে বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দরকার প্রায় দেড় হাজার। কিন্তু রয়েছেন মাত্র ৫২ জন। এর ফলে অনেক সময়েই সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হন দগ্ধরা।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ১১৬ জন নানাভাবে দগ্ধ হন। এদের মধ্যে মারা যান ৬ হাজার ৩৫২ জন। আর চলতি বছরের প্রথম দেড় মাসে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১৩৮ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন।
তবে শুধু বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব নয়, এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বার্ন চিকিৎসার যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় দগ্ধ রোগীদের মৃত্যুর হার বাড়ছে বলেও জানান ডা. সামন্ত লাল সেন।
ঢাকার বাইরে আগুনে দগ্ধদের ঢাকায় নিয়ে আসতে অনেক সময় লাগে। ফলে রোগীকে বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে বার্ন চিকিৎসাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দগ্ধ রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বার্ণ ইউনিটের চিকিৎসক ডা. তানভীর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দগ্ধ হওয়ার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সঠিক চিকিৎসা পেলে শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কেউ দগ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আইভি লাইনগুলো ওপেন করে দিয়ে সেলাইন দিতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ দগ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে তা করা হয় না।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এই কাজটুকু করতে পারলে দগ্ধ রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনাসহ পরবর্তীতে ব্রেইন, কিডনি ও লিভার ড্যামেজসহ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব। এক্ষেত্রে বার্ন বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় পেট্রোলবোমার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দগ্ধ রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানালেন বার্ন বিশেষজ্ঞরা।
বার্ন বিশেষজ্ঞ গড়ে তুলতে হলে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু করার ওপর জোর দেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, এখন প্রতি বছর মাত্র ৩ জন করে বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বের হচ্ছে। কিন্তু বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হলে বছরে ১৮ থেকে ২০ জন করে বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বের হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যে কোনো কারণেই হোক না কেন, গরীব মানুষই দগ্ধ হন বেশি। তাই তাদের চিকিৎসায় সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। দু’ একটি বেসরকারি হাসপাতালে বার্ন চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দগ্ধ গরীব রোগীদের পক্ষে সেখানে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয় না।
এছাড়া বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট খোলা হলেও সেখানে বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কটে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলানিউজ টিমকে নিশ্চিত করেছে।
এ অনুসন্ধানে বাংলানিউজ টিমের সদস্য হিসেবে ছিলেন আবাদুজ্জামান শিমুল, নুরুল আমিন, আদনান রহমান ও আবু খালিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫