ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

উডা, খালি ১শ’, খাড়াইয়্যা ১শ’, একটা সিট ২শ’

আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫
উডা, খালি ১শ’, খাড়াইয়্যা ১শ’, একটা সিট ২শ’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ঢাকাগামী এজি পরিবহনের চালক ইসমাইল হোসেন বাস স্টার্ট দিয়ে নিজেই দরজায় দাঁড়িয়ে অনেকটা ছড়া কেটে হাঁক দিচ্ছেন- উডা, খালি একশ’। খাড়াইয়্যা একশ’।

সিট নাই একশ’। একটা সিট ওয়ান পিস দুইশ’।  

বাসের উঠতে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ভিড় ঠেলে হেলপার আলমগীর হোসেন এ সময় বললেন, ও ওস্তাদ তুলুইন, তুলুইন। শুধু খাড়া একশ’।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টার হরতালের আগে শনিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকের ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম ব্রিজমোড় বাসস্ট্যান্ডের দৃশ্য ছিল এটি।

অবরোধ পেছনে ফেলে পেটের দায়ে কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড়ে গিজগিজ করছে এ বাসস্ট্যান্ড। হরতালের আগের রাতে যানজট ও জনজটে একাকার গোটা ব্রিজ মোড় এলাকা। এমন চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই যে, লাগাতার অবরোধ চলছে দেশে।

ঢাকাগামী প্রায় প্রতিটি গণপরিবহনই ছিল যাত্রীভর্তি। ঝুঁকি আর অসহনীয় কষ্ট সহ্য করে শুধু জীবিকার তাগিদেই বাসের ছাদে কিংবা ভেতরে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেলো অনেক যাত্রীকে। প্রায় প্রতিটি বাসেই ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী।

বাড়ি থেকে কাজে ফেরার লড়াইয়ে অনেকটা জিম্মি করেই যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। মূলত স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাস কিছুটা কম থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়েই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় বলে অনেক যাত্রীর অভিযোগ।

তবে এমন অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে যুবক বয়সী বাস চালক ইসমাইল বলেন, আইজক্যা বন্ধের চাপ। এইল্লেইগ্যা ভাড়া বেশি। দুইডা টাকা বেশি পামু বইল্ল্যাইতো ঢাকা যাইতাছি।

যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় বাসের সিটে, দাঁড়িয়ে এবং ছাদে কমপক্ষে একশ’ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছুট দেন এ চালক।

অবরোধে ভয় আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই ইসমাইলের উত্তর, রাস্তাঘাটে প্রচুর জ্যাম। কোনো রিস্ক নাই। অহনও কোনো নাশকতা অইছে না।

চালকের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় হেলপার আলমগীর এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বললেন, আমার কাছ থেইক্ক্যা খবর লইন। শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেইক্ক্যা ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা দিছিলাম। রাত সাড়ে আটটায় আইসা পচ্ছি। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। আইতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাগতাছে।

গাজীপুরের মাওনা যাবেন গার্মেন্টস কর্মী মোজাম্মেল। বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায়। সঙ্গে স্ত্রী। তিনি কাজ করেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। জানতে চাইলে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, কোনো গাড়িতেই সিট নাই। যাইমু কেমনে? মহিলা লইয়্যাতো আর দাঁড়াইয়্যা যাওন যাইবো না।

গন্তব্যে ফিরতে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে বাসে চড়তে না পেরে মলম গাড়িতে (ছোট পিকআপ) চেপে বসেছেন। স্থানীয় র‌্যামন ফ্লাওয়ার মিলস নামে একটি পিকআপের হেল্পার স্বপন গলা ছেড়ে যাত্রীদের ডাকছিলেন, ডাইরেক (সরাসরি) মহাখালি একশ’, একশ’।

তখনো এ পিকআপ চেপে আছেন ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী। তাদের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া মানুষ ও গার্মেন্টস কর্মী।

পিকআপে যাত্রী তোলার ফাঁকে সিটে বসে সিগারেট ফুঁকছিলেন চালক নবী হোসেন। হরতালের আগের রাতের শঙ্কার কথা বলতেও ভোলেননি, ঝুঁকি লইয়্যা যাইতাছি। কিছুই করার নাই। এতোদিন হরতাল-অবরোধ দিলে কেউ মানে না। সবারইতো ভাই পেটের চিন্তা আছে।  

ঠিক পেছনেই আরেকটি পিকআপে চড়ে গাজীপুর চৌরাস্তায় যাচ্ছেন গার্মেন্টস কর্মী আসমা (৩০)। সঙ্গী আরো ১৫ থেকে ২০ যাত্রী। ব্রিজ মোড়ে জ্যামের কারণে তাদের বহনকারী পিকআপ থেমে থেমে চলছে।

কিছু জিজ্ঞেস করতেই রাজ্যের ক্ষোভ ঝরলো তার কণ্ঠে, সব কষ্টতো গরীবের। অনেক বাস আছে। কিন্তু ভাড়ায় বনতাছে না। চৌরাস্তা পর্যন্ত যাইতে তিনশ’ টাকা বাস ভাড়া চায়। তাই ঝুঁকি লইয়্যা এই মলম গাড়িত চড়ছি। রাস্তায়ওতো খুব একটা ভালো না। যাইতে যাইতে জান বাইর অইয়্যা যাইবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশ বললেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন বাসের সংখ্যা কিছুটা কম। আগে এখান থেকে তিন থেকে চার মিনিট পর পর ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যেতো। এখন এক ঘণ্টা পর পর বাস ছাড়ছে।  

বাংলাদেশ সময়:১১৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।