ঢাকা: সুখ-এ পোকা লাগে। ছোট ছোট আনন্দগুলোকে কেটে নিঃশেষ করে দেয়।
জীবনকে কেটে ছোট করে বা নিঃশেষ করে দেওয়া ওই পোকার নাম ক্যান্সার। মাত্র তিন মাস আগে ব্রেইন হেমারেজে পরপারে চলে গেছে মান্নার স্বামী ডা. রাজিব সরকার। সাড়ে আট বছরের মেয়েকে নিয়ে এখন স্তন্য ক্যান্সারে ধুঁকছেন মান্না। মেয়ের স্কুলে যাওয়া কোনক্রমে টিকে থাকলেও, খেলা বন্ধ, বন্ধ স্বাভাবিক জীবন যাপনও। রং পেন্সিল দিয়ে রঙিন জীবন আঁকার বয়সে মায়ের সঙ্গে যেতে হচ্ছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চাকেন্দ্রে।
রাতগুলো পার করছে ঘুমহীন। শংকায়, উৎকণ্ঠায়। আত্মী-পড়শীদের আলাপে সমবেদনায় এ শিশুটিও জেনে গেছে তার মাও যে কোন সময় বাবার কাছে না ফেরার দেশে চলে যাবে।
আছমা আফরোজ মান্নার জীবন কখনোই রূপকথার দুঃখী রাজকুমারীদের মত ছিল না। বরং সেলুলয়েডের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রটির মতোই উজ্জ্বল তিনি। স্কুল থেকেই পড়াশুনায় শীর্ষস্থানীয়। চমক লাগানো রেজাল্ট এসএসসি-এইচএসসি’র। এরপর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে। পাস করে অংশ নেন ২৪তম বিসিএস-এ। পোস্টিং হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের অ্যাসিট্যান্ট রেজিস্ট্রার হিসেবে বদলি। এরমধ্যে গাইনি আর সার্জারিতে দুই বার এফসিপিএস সেরে ফেলেন তিনি।
শিক্ষা জীবনের মতোই ঝকঝকে তার ব্যক্তিজীবনও। সহপাঠী ডা. রাজিব সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় ২০০৩ সালে। সে সময়ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি রাজিব। পেশাজীবন শুরু করার পর সদস্য হন স্বাধীতনা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ)।
মান্না-রাজিব দম্পতির কোল আলো করে মেয়ে রোকসানা আসে বিয়ের তিন বছর পর। এর মধ্যেই ২৭তম বিসিএস দিয়ে রাজিবও যোগ দেন ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে। দুর্দান্ত মেধাবী এই দম্পতির মেয়েটিও মা বাবার মতোই মেধার আলো ছড়াচ্ছে। পড়ে ক্লাস থ্রিতে। আজ পর্যন্ত কখনো ক্লাসে দ্বিতীয় হয়নি সে।
তবে মান্নার সুখ হয়তো সীমা ছাড়িয়েছিল! ২০১৩ সালে তাঁর ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে। একটি স্তন কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। দুবির্ষহ কেমোথেরাপি চলছে। এরই মধ্যে একেবারে আকস্মিকভাবে গত বছরের ২৪ নভেম্বর ব্রেইন হেমারেজে মারা যান রাজিব। অবলম্বন আর আশ্রয়-দুই-ই চোখের সামনে থেকে সরে যায় মান্নার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেরা স্কুল থেকে সরিয়ে ঢাকায় মায়ের বাড়ির পাশে শুক্রবাদ সরকারি স্কুলে ভর্তি করেন মেয়েকে। ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে এই অসাধারণ মেধামী মানুষটির লড়াইয়ের শক্তি।
তার চেয়েও দ্রুত ফুরাচ্ছে আর্থিক সঙ্গতি। চাকরিতে ওএসডি, সংযুক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঋণ বাবদ টাকা কাটার পর সাকুল্যে বেতন ১৭ হাজার ৪০০ টাকা। চিকিৎসায় এরই মধ্যে ২৫ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়ে গেছে। এখন চিকিৎসা চলছে ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. মোফাজ্জল হোসেনের তত্ত্বাবধানে। ১৭টি কেমো দেওয়ার কথা। দেওয়া হয়েছে চারটি। ২১ দিন পর পর কেমো দিতে হবে। প্রতিবারের খরচ দুই লাখ টাকা। পাশাপাশি ওষুধ-পথ্য-সেবা তো রয়েছেই।
লড়াকু এই মেয়েটি এখন হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। আমাদের অল্প কিছু সহায়তা, সহানুভূতি হয়তো মান্নাকে আবার জীবনে ফেরাতে পারে। দূর করতে পারে ছোট্টশিশু রোকসানার অনিশ্চয়তা। তাঁর ব্যাংক হিসাব নম্বর: ০২০০০০২৩৭৩৮৪৭, সুইফট কোড এজিবিকেবিডিডিএইচ০৩৬, অগ্রণী ব্যাংক, গ্রিনরোড শাখা, ঢাকা। বিজ্ঞপ্তি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৪