ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
সঙ্গত কারণেই দেশের সব সংবাদমাধ্যমের এ বৈঠক সম্পর্কে জানার কৌতূহল থাকলেও মাত্র গোটা কয়েক বাছাই করা সংবাদকর্মীকে এ বিষয়ে ব্রিফিং করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এখন প্রশ্ন উঠেছে সব সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে এত আপত্তি কেন তার?
অনেকেই বলছেন, এতে স্পষ্টত সংবাদমাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টি করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী- যা একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে কখনও কাম্য নয়।
রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাত্র দুটি পত্রিকা ও দুটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের চারজন সাংবাদিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের নিমন্ত্রণ পায়।
তবে শেষ পর্যন্ত তিন জন সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।
এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিক্যাব) প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারিকেও আমন্ত্রণ জানাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিম বাংলানিউজকে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর সম্পর্কে একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে আমারও কিছু জানার ছিলো। কিন্তু আমন্ত্রণ পাইনি। শুনেছি, আমার কিছু সহকর্মীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তা জানি না।
মন্ত্রীর এই গুটিকয় সাংবাদিক নিয়ে করা ব্রিফিং প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিট করা একজন টেলিভিশন সাংবাদিক তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রী নাকি নির্দিষ্ট কিছু দৈনিককে সাক্ষাতকার দেবেন আজ। ….দিতেই পারেন। কিন্তু বাকি পত্রিকা ও টেলিভিশনের দোষটা কী জানতে পারি? নাকি তিনি সবার মুখোমুখি হতে চাইছেন না?’
পছন্দের সাংবাদিকদের ডাকা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাভার করেন এমন এক সাংবাদিক বাংলানিউজকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার পরামর্শ মেনেই মন্ত্রী এই গুটিকয়েক সাংবাদিককে ডেকেছেন। এমনটি তিনি প্রায়ই করে থাকেন। এই কয়েকজন সাংবাদিক যে মন্ত্রীর দলীয় মনোভাবাপন্ন তাও নয়। এদের বেশির ভাগেরই আচরণ সরকার বিরোধী। হয়ত মন্ত্রী সেটা জানেন না বা তার উচ্চ পর্যায়ের সেই কর্মকর্তা জানতে দেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওই কর্মকর্তার পরামর্শ ছাড়া কোনো কাজ করেন না।
সাধারণত এ ধরনের সফর শেষে দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব সংবাদমাধ্যমের অংশগ্রহণে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
কখনও সফরের আগেও সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। এবারের সফরের আগে সে সুযোগ না পাওয়ায় ফিরে এসে মন্ত্রী মিডিয়াতে কথা বলবেন-এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলেন সংবাদমাধ্যম কর্মীরা।
আর গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এটাই ছিল প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।
তাই এ সফর ঘিরে সাংবাদিকদের প্রত্যাশা বেশী থাকলেও সবাইকে হতাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তালিকাভুক্ত কয়েকজন সাংবাদিক নিয়ে তার ব্রিফিং নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও তিনি একই সাংবাদিকদের নিয়ে ব্রিফ করেছেন।
শুধু ব্রিফিং নয়, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ নানা অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানালেও পছন্দের গণমাধ্যম ছাড়া অন্যগুলোতে অংশ নেন না পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান মাহমুদ আলী। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা ফেরেন তিনি। এরই মাঝে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা থাকলেও ফ্লাইট দেরি হওয়ায় দেশে ফিরে সে সুযোগ পাননি মাহমুদ আলী। ফলে মমতার সম্মানে শনিবারে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত মাহমুদ আলীর চা চক্র রূপ নেয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের চা চক্রে।
এমনকি মমতাকে স্বাগত জানানো এবং বিদায় জানানোর কাজটি করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫