ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

খালেদা পাকিস্তানিদের মতো গণহত্যা করছেন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫
খালেদা পাকিস্তানিদের মতো গণহত্যা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: একাত্তরে পাকিস্তানিরা যেভাবে বাঙালির ওপর গণহত্যা চালিয়েছে সেই একইভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গণহত্যা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় বসার জন্য ‘উত্তর পাড়ার’ দিকে তাকিয়ে আছেন বলেও মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর।



রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে যে অবরোধ-হরতাল করছেন এর সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী যেমন বাঙালির ওপর গণহত্যা চালিয়েছে সেই একই কায়দায় খালেদা জিয়া গণহত্যা চালাচ্ছেন। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা করে গেছে, এখন খালেদার বাহিনী গণহত্যা করছেন।

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, মুখে গণতন্ত্রের কথা বলবেন; আর তাকিয়ে থাকবেন উত্তর পাড়ার দিকে, তারা ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় কি-না। যদি ওই দিক থেকে এসে কিছু একটা করে! কিন্তু সেই আশা করে লাভ হবে না। কেউ যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, তার জন্য ক্যাপিটাল পানিসমেন্টের (সর্বোচ্চ শাস্তি) ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন করে। যাদের দিকে উনারা তাকিয়ে আছেন তারাও এটা জানেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে পুড়িয়ে মেরে, মানুষের জন্য উনি কী অধিকার রক্ষা করবেন? মানুষকে পুড়িয়ে মেরে লাশ করে কোন তন্ত্র কায়েম করবেন? আইএস (ইসলামি স্টেট) মানুষ পুড়িয়ে মারছে। উনিও মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। এতে বোঝা যায় কার সঙ্গে উনার লিংক। তিনি (খালেদা জিয়া) আইএসআই (পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা)’র এজেন্টদের নিয়ে কাজ করছেন, আরেক দিকে আইএস-এর পথ ধরে কাজ করছেন।

আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, সুশীল সমাজের যারা পরামর্শ দেন এভাবে হরতাল-অবরোধ দিয়ে ছেলে-মেয়েদের এসএসসি (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় বাধা দেওয়া এবং মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে তারা কোনো কথা বলছেন না। তারাও তাকিয়ে আছেন ওই দিকে (উত্তর পাড়া)। ওখান থেকে এসে যদি কিছু একটা হয়, তাহলে তারা (সুশীল সমাজ) পতাকা পাবেন। এ জন্য তারা এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন না। ভেবে ছিলাম ড. কমাল হোসেন এসএসসি পরীক্ষার দিন হরতাল না দেওয়ার কথা বলবেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি।

সংবিধান সংশোধনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে ক্যাপিটাল পানিসমেন্টের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এরা যাদের ভরসা করছেন, তারাও এটা জানে। জিয়া, এরশাদ, মাঈনউদ্দিনের পরিণতি কি হয়েছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহর টেলিফোন ও মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতির প্রসঙ্গে বিএনপি যে তথ্য তুলে ধরেছে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের ধাপ্পাবাজি ভারত ও আমেরিকা বুঝে গেছে। এভাবে তাদের কাছে ধরনা দিয়ে লাভ হবে না। তারা এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন না। তারা বুঝে গেছেন। মর্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও পেট্রোল বোমা বন্ধ করতে বলেছেন।   

তার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত নির্বাচনে আসতে পারেনি। তাই খালেদা জিয়াও নির্বাচনে আসেননি। সে সময় তারা নির্বাচন বন্ধ করতে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, জ্বালাও-পোড়াও করেছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছে। নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে আমরা দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি।

‘উনার (খালেদা জিয়া) হরতাল কে মানছে’ প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ মানছে না তার হরতাল। তাতে কি উনার লজ্জাও নেই। আইএস ৪৫ জন মিশরীকে খাচার মধ্যে পুড়িয়ে মেরেছে। উনিও পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। আমি জানি না এই নারীর মনে কোনো দয়া-মায়া আছে কি-না। এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন, ধারাও পড়েছেন। সেই মামলা চলছে। চুরি করেছেন তাই মামলা মোকাবেলা করতে সাহস পাচ্ছেন না। নিজের দুর্নীতি ঢাকা এবং মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করছেন।

তিনি বলেন, মানুষ কোনো পাপ কাজ করলে দোজখের আগুনে পুড়তে হবে। কিন্তু খালেদা কোন দোজখখানা বানাচ্ছেন। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন। কেন জনগণকে এভাবে মারবেন, কষ্ট দেবেন! কী অধিকার আছে খালেদা জিয়ার দেশের মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে মারার? যারা এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারছে তারা একদিন বাংলার মাটিতে অবশ্যই শাস্তি পাবে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যেভাবে বিচার হয়েছে, রায় কার্যকর হয়েছে।   যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। রায়ও কার্যকর হবে।

প্রধানমন্ত্রী বোমাবাজদের ধরিয়ে দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা বোমা বানাচ্ছে, যারা সরবরাহ করছে, যারা বোমা মারছে এদের ধরিয়ে দিন। ধরিয়ে দিলেই পুরস্কার। জনগণ ইতোমধ্যে বোমাবাজদের ধরতে শুরু করেছে। আমি এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক রাহাত খান প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসিম কুমার উকিল।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫, আপডেট ২১২১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।