যশোর: যশোরের অভয়নগর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে কুকুরের কামড়ে শিশুসহ অর্ধশত ব্যক্তি জখম হয়েছেন।
শনিবার সকাল থেকে রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত নওয়াপাড়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার ভাঙ্গাগেট, বুইকরা, সরখোলা, চলিসিয়া, বিভাগদি, মধ্যপুর, বানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পৌরসভায় জলাতঙ্ক রোগ প্রতিশোধক ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় মহাবিপাকে পড়েছেন দরিদ্র লোকজন।
রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার কোটা পায়রা গ্রাম থেকে অভয়নগর সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রেশমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) তার মেয়ে তানজিলাকে (০৭) কুকুরে কামড় দেয়। পরে হাসপাতালে এলে চিকিৎসক ভ্যাকসিন কিনে আনার জন্য প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়। তবে দোকানে প্রতিটি ভ্যাকসিন ৫৭০ টাকা দাম। এতে পাঁচটি ভ্যাকসিনের ফুল ডোজের দাম ২ হাজার ৮৫০ টাকা। কিন্তু দরিদ্র হওয়ায় কারণে খুব চিন্তায় পড়েছেন।
কুকুরের কামড়ে জখম শিশুদের স্বজনদের অভিযোগ, আক্রান্তদের হাসপাতালে নেয়া হলেও সেখান থেকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়- সেখানে জলাতঙ্ক রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই। এতে কুকুরে কামড়ানো শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তাদের স্বজনরা। বাধ্য হয়ে অনেকে তাদের সন্তানদের ব্যক্তিগত ভাবে চিকিৎসা দেন।
এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, কুকুরের কামড়ে জখম হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুল শিক্ষার্থী। তাদের কয়েকজন হলো- মিন্টু হাওলাদারের মেয়ে ফাতেমা (১০), ইসরাইলের ছেলে সোহান (৮), শরিফুলের মেয়ে মাহিমা (১০), ফারুক হোসেনের ছেলে রমজান (৩), শহিদুলের ছেলে আলমগীর (৯), আলী আহম্মেদের ছেলে তোহা (৯), আবুল হোসেনের ফরহাদ হোসেন (৭), হাবিবুর রহমানের ছেলে রুবেল (৭), নজরুল ইসলামের মেয়ে হালিমা (৫), সালাম হাওলাদারের মেয়ে তাবাসুম (৫), গাজী রানার বিজন (৯), সলেমান বিশ্বাসের ফরহাদ হোসেন (১২), সামাদ মোল্লার মেয়ে ইমা (৪)।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন এলাকায় কুকুরে কামড়ানোর খবর জানাজানি হলে কুকুর আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পৌর সভায় জলাতঙ্ক রোগ নিরাময়ের ভ্যাকসিন না থাকায় কুকুরের কামড়ের শিকার হওয়াদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাদের স্বজনরা।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বদরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের কোনো উপজেলায় জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন সরকারিভাবে সরবরাহ নেই। তবে, স্থানীয় নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র ২৫টি ভ্যাকসিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তা করেছে। ওই ভ্যাকসিন থেকে রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) ১৬ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এবং রুবেল নামে এক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শাহাদৎ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের সহযোগিতায় আক্রান্তদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হক মোল্যা বাংলানিউজকে বলেন, সরকারিভাবে ভ্যাকসিন কেনার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্ধ হয়েছে। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে। তবে এ মুহূর্তে নিজেদের টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যতো ভ্যাকসিন লাগে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। তবে কুকুরটি মারার ব্যাপারে পৌর চেয়ারম্যান দেখছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫