ঢাকা: ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের অপকর্মের ডালপালা দিন দিনই বেড়ে চলেছে। তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাটের পাগলা ঘোড়া লাগাম টেনেও থামানো যাচ্ছে না।
তাকসিম এ খান সিন্ডিকেটের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হয়েছে ঢাকা ওয়াসার পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-১)। প্রকল্পের অনুমোদন হয়নি অথচ তার আগেই পছন্দমাফিক ঠিকাদারের সঙ্গে কাজের চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দরপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, কোনোরকম ভেটিং পর্যন্ত করা হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। ওই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের আগে চড়া সুদের টাকায় নিম্নমানের পাইপ আমদানিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পদ্মা (জশলদিয়া) প্রকল্প থেকেই ৫০০ কোটি টাকা লুটপাটের ফন্দিফিকির চূড়ান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি-লুটপাটের সবকিছু ঠিকঠাক রাখার স্বার্থে প্রকল্পের পরিচালকের পদ থেকে প্রকৌশলী এম এ রশিদ সিদ্দিকীকে পর্যন্ত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্পের (ফেজ-১) ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার ও ঢাকা ওয়াসা। ঋণের জন্য চায়নার এক্সিম ব্যাংককে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। সরকার ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর একনেকের বৈঠকে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দেয়। পদ্মার জশলদিয়া পয়েন্টে এ শোধনাগারটি স্থাপন হবে। সেখান থেকে পরিশোধিত পানি কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য বসানো হবে পাইপ। বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশ দিয়ে এ পাইপ পৌঁছে যাবে রাজধানীতে। এজন্য জশলদিয়া পয়েন্ট এবং কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত পাইপ বসানোর জন্য জমির প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে সরকারি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি, চূড়ান্ত প্রকল্প অনুমোদনও হয়নি।
সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা চুক্তি করে ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। এ ক্ষেত্রে কোনো দরপত্র পর্যন্ত আহ্বান করা হয়নি। দরপত্র আহ্বান হলে অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিত এবং ভেটিং পদ্ধতিতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ কমে যেত নির্মাণ খরচ। ফলে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে অন্তত ৩৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। এদিকে এমডির ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি উল্টো শর্ত জুড়ে দেয়। চীন থেকে নিম্নমানের পাইপ উচ্চ দামে আমদানি করার শর্ত পালন করায় ওয়াসা আরও ১৫০ কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে। ওয়াসার পুরনো ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, গচ্চা, ভর্তুকি, দরকষাকষি না করার বাহানায় মূলত কোটি কোটি টাকা লুটপাটই করা হচ্ছে। ফলে পদ্মার জশলদিয়া প্রকল্প শুরুর আগেই ৫০০ কোটি টাকা হরিলুটের সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে।
৫০ কোটি টাকার লুটপাট প্রকল্প : এদিকে ঢাকা ওয়াসা ঢাকঢোল পিটিয়ে গুলশান লেককে দূষণমুক্ত করার যে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তাও লুটপাট প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ও হয়ে গেছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অসংখ্য নালা-নর্দমার সংযোগপথে প্রবাহিত পয়ঃবর্জ্যে লেকজুড়ে সীমাহীন দূষণ ঘটেই চলছে। সেখানে উন্নয়ন কাজ বলতে কী হয়েছে তাও জানেন না আশপাশের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, কাগজপত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ৫০ কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে মাত্র। রাজউকের তথ্যমতে, গুলশান-বারিধারা লেকের বড় ১৮টি পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন সরাসরি পয়ঃবর্জ্য মিশছে গুলশান লেকে। এর বাইরে মাঝারি ও ছোট আকারের আরও ৩৫টি পয়েন্ট থেকে তা মিশছে লেকে। বারিধারা ডিওএইচএস, কালাচাঁদপুর, বনানী ১১৮ নম্বর রোড, ন্যাম ভিলার দক্ষিণে বনানী ২ নম্বর রোড, মহাখালী-গুলশান লিংক রোড, গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের নিচ এবং কড়াইল লেকসংলগ্ন বস্তি এলাকায় অনেক নালার মাধ্যমে মানুষের মলমূত্রসহ বিভিন্ন আবর্জনা মিশছে লেকের পানিতে। কড়াইল বস্তি এলাকায় অনেক টয়লেটের সরাসরি সংযোগ রয়েছে লেকের সঙ্গে। এসব সংযোগ বন্ধ করার ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা বরাবরই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার গুলশান লেক দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানান, গুলশান লেক নিয়ে ওয়াসার প্রকল্পের কাজ আরও আগেই শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হলেও লেকের পয়ঃবর্জ্য সংযোগ বন্ধ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যতগুলো সংযোগ পেয়েছি সব বন্ধ করেছি। এখন নতুন করে সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে’। তিনি আরও বলেন, এত বড় লেক, এত কম টাকায় পয়ঃবর্জ্য সংযোগ বন্ধ সম্ভব নয়। তা ছাড়া আশপাশের বাসিন্দারা নতুন নতুন পয়ঃবর্জ্য নালা সৃষ্টি করলে সেসব দায়ভার ওয়াসার ওপর আসবে কেন? সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময় ১০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫