ঢাকা: রেলওয়ের আবাসিক ভবন ও বাসাবাড়িতে সাবলেট দেওয়ায় সংসদীয় কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এরআগে কমিটির অন্য মিটিংয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে।
কিন্তু সেই প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি মন্ত্রণালয়। এনিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এছাড়া কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের অগ্রগতি না থাকায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটি।
বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের ক্যাবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৯ম বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, কমিটির তৃতীয় বৈঠকের সুপারিশ মোতাবেক রেলওয়ের বাসাবাড়িতে সাবলেট প্রদানকারী এবং অবৈধ বসবাসকারীদের বিষয়ে আজ (বুধবার) পর্যন্ত বিস্তারিত প্রদিবেদন উপস্থিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সভাপতি এ. বি. এম ফজলে করিম চৌধুরী ও সদস্য আলী আজগর।
সভাপতি অবৈধ দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাসহ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপের অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করেন।
কমিটি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ও চট্টগ্রাম স্টেশনের রেল দুর্ঘটনা সম্পর্কে সভাপতি জানতে চাইলে, পূর্বাঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক জানান, রেল দুর্ঘটনা দু’টির জন্য চালক ও এএলএম দায়ী। দায়ী ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলার জন্য বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানায়, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠকে দুর্ঘটনা রোধ করতে টার্নিং পয়েন্টে ফেন্সিং (বেষ্টনী) দেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সভাপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে কমিটির সদস্য ইয়াসিন আলী চলতি সংসদ অধিবেশনে যোগদানের জন্য দিনাজপুর স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করেও ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এমন ঘটনায় কমিটির সদস্য ইয়াসিন আলী ও মোহাম্মদ নোমান বিমানের মতো ট্রেনে সংসদ সদস্যদের জন্য রিজার্ভ সিট রাখার সুপারিশ করেন। টিকিট না পাওয়ার ঘটনায় বৈঠকে উপস্থিত রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট্যদের নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান।
বৈঠকে রেলওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান পরিচালিত রেলওয়ের রাজস্ব আদায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
কমিটি সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে মিটারগেজ ২টি মেইল ট্রেন, ১২টি কমিউটার ট্রেন ও ২৬টি লোকাল ট্রেন এবং পশ্চিমাঞ্চলে মিটারগেজ ৪টি মেইল ও ৪টি লোকাল ট্রেন এবং ব্রডগেজ ১০টি মেইল ও ৮টি লোকার ট্রেনসহ সর্বমোট ৬৮টি ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
এসব ট্রেনে মাসিক গড় আয় দুই কোটি ৬৫ লাখ ১৭ হাজার সাতশ’ ৯৬ টাকা। প্রাইভেট ট্রেনগুলোতে প্রতি মাসে কত টাকার তেল/অপারেটিভ ব্যয় হয় তার হিসাবের একটি প্রতিবেদন কমিটির পরবর্তী বৈঠকে প্রদানের সুপারিশ করা হয়।
পাহাড়তলী রেল স্টেশনে কি পরিমাণ পার্চেজ করা হয়েছে তার একটি হিসাব কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে কমিটি।
এ. বি. এম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটি সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মো. আলী আজগর, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মোহাম্মদ নোমান, ইয়াসিন আলী এবং ফাতেমা জোহরা রানী বৈঠকে অংশ নেন।
এছাড়া ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫