যশোর: যশোর রবীন্দ্রনাথ (আরএন) সড়ক এলাকার বাসিন্দা নাহিদ নূর ইসলামের দু’টি পা নেই। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাতে যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে বোমা হামলার শিকার হয়ে তিনি তার পা হারান।
ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরএন রোড এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে নাহিদ নূর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি তখন উঠতি বয়সী যুবক। ট্রাক ড্রাইভার বাবার সংসারে অভাব ঘোঁচাতে বাস কাউন্টারে চাকরি নিয়েছি। সারাদিন কাজ শেষে আনন্দে আটখানা হয়ে বন্ধুরা মিলে রাত ১১টার দিকে টাউন হলের উদীচীর অনুষ্ঠানে গান শুনতে যাই। শিল্পীদের গানে গানে দর্শকরা আনন্দিত। হঠাৎ রাত ১টা ১০ মিনিটের দিকে পরপর দু’টি শক্তিশালী বোমায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সবকিছু। সেখানে আমিও অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে যখন জ্ঞান ফিরে ততক্ষণে আমার দুটি পা হারিয়ে ফেলেছি।
তরপর থেকেই নাহিদ দু’পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে এক বিভীষিকাময় জীবন অতিবাহিত করছেন।
ওই ঘটনায় গুরুতর আহত শেখ মনোয়ার আলম মনু বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় একটি পত্রিকায় ফটোগ্রাফার ছিলাম। পেশাগত দায়িত্ব পালনে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাই। রাত ১টার পর প্রথম বোমার বিস্ফোরণ হলে মুহূর্তেই সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায়। এতে আমি সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হলেও চারদিকে লাশের মতো পড়ে থাকতে দেখি কয়েকশ’ মানুষকে।
‘ওই সময় শিল্পী সন্ধ্যা রানী ঘোষের মরদেহসহ লণ্ডভণ্ড দৃশ্যের কয়েকটি ছবি তুলি। এমন মুহূর্তে রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে আরও একটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই’- বলেন শেখ মনোয়ার আলম মনু।
পরে সরকারিভাবে তাকে চিকিৎসা দেয় হয়। পেটে চারটি কৃত্রিম নাড়ি স্থাপন করে জীবন রক্ষা পায় বলেও জানান তিনি।
এছাড়া বোমার আঘাতে সমির নামে এক ব্যক্তি একটি পা হারান, আকরাম নামে এক ব্যক্তি পঙ্গু হন, সুকান্ত নামে এক উদীচী কর্মীর এক পা চিরদিনের জন্য অক্ষম হয়ে যায়, চৌগাছার হরেন ঘোষাই নামে এক সাংস্কৃতিক কর্মীর দুই পা হারিয়ে পঙ্গু জীবন নিয়ে অতি কষ্টে বেঁচে আছেন।
দুই পা হারানো নাহিদ নূর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকার আহত ও নিহতদের পরিবারকে অনেক সাহায্য করেছে। সরকার সাহায্য না করলে হয়তো আমার মতো মানুষের জীবনে বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না।
তবে এভাবে বেঁচে থাকা অনেক বেদনাদায়ক ও কষ্টের বলেও জানান নাহিদ।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চিকিৎসা করার মত অর্থ আমাদের নেই। জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন ট্র্যাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার নানাভাবে সহায়তা করছে। তবে আমাদের মতো মানুষকে ফুল বাগানের পাহারাদার হিসেবেও একটি চাকরি দিলে পেটভরে খেয়ে দুশ্চিন্তামুক্তভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম।
একটি চাকরি কিংবা তাদের ছেলে-মেয়েদের একটা ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগের জন্য নাহিদ বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
তবে এ ঘটনায় হামলাকারীদের বিচার না হওয়ায় আহত ও নিহতদের স্বজনরা ব্যাপক ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২২ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫