নীলফামারী: সচেতনতা আর প্রচার-প্রচারণার অভাবে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন না নীলফামারীর তামাক চাষিরা। অন্যান্য ফসলের চেয়ে দাম ভাল পাওয়ায় এবং তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় দিব্যি চলছে তামাক চাষ।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের তামাক চাষি খতিব উদ্দিন বলেন, তামাক শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ হয় তামাকে।
অপর কৃষক নুর ইসলাম বলেন, আমি কোন দিন শুনিনি তামাক চাষ করা যাবে না, কেউ কোন দিন বলেনি, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা আছেন গ্রাম পর্যায়ে। তারাতো বলতে পারেন কৃষকদের, কিন্তু বলেন না কেন।
সম্প্রতি শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া তামাকের পাতা কেটে শুকিয়ে ঘরে রাখতে শুরু করেছেন নীলফামারী সদর উপজেলা পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের বাজিতপাড়া গ্রামের কৃষক নুর জাহান বেগম।
তিনি বলেন, রেডিও টিভিতে শোনা যায় ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু তামাক চাষ ক্ষতিকর এটা কেউ আমাদের বলেনি।
তামাক ব্যবহারে শরীরে সর্দি, কাশ, হুপিং কাশি হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তারপরও তিনি বলেন, চার হাজার টাকা খরচ করলে দশ হাজার টাকা পাওয়া যায় তামাক বিক্রি করে।
নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী, লক্ষ্মীচাপ, চাপড়া সরমজানি, গোড়গ্রাম, পলাশবাড়ি, রামনগর, কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী, নিতাই, বড়ভিটাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে দেদারছে চলছে তামাকের আবাদ।
কৃষি বিভাগ নীলফামারী সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ৪৭৯০ হেক্টরে ৭৭৬০ মেট্রিক টন, ২০১৩ সালে ৪৬২০ হেক্টরে ৮৬৩৯ মেট্রিক টন, ২০১৪ সালে ৪৯৪০ হেক্টরে ৮৫৯৬ মেট্রিক টন এবং চলতি ২০১৫ সালে ৪৩৮৫ হেক্টরে চাষ হচ্ছে তামাক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার জন্য কৃষি বিভাগ গ্রাম পর্যায়ে কর্মকর্তাদের দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। পরিবর্তে গম, ভুট্টা, ডালসহ বিভিন্ন ফসল চাষের কথা বলা হয়। দিনদিন তামাক চাষ কমছে।
তবে সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেডিও- টিভিতে প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সরকারি নানা উদ্যোগে তামাক চাষাবাদে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও ভাল দাম পাওয়ার কারণে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন তামাক আবাদে।
তামাক কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে সহযোগিতা করায় কৃষকরা তামাক আবাদ থেকে সরে আসছে না বলেও অভিযোগ করেন একাধিক কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫