ঢাকা : নারী নির্যাতন ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্বের আলোচিত ৭ নারীর জীবনী নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে নারী দিবস উপলক্ষে। ইউএন উইমেন এবং অ্যাকশন এইড যৌথভাবে প্রদর্শীর আয়োজন করেছে।
বুধবার (০৪ মার্চ) দুপুরে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘সেভেন’ নামে প্রামাণ্যচিত্রটি ৬ মার্চ শুক্রবার ছায়ানট ভবনে প্রদর্শিত হবে।
প্রামাণ্যচিত্রে আলোচিত ৭ জন নারীর জীবন কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। যারা নারী নির্যাতন, নারীর অধিকার, শিশু নির্যাতন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কাজ করে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছেন।
আলোচিত ওই ৭ নারীর মধ্যে রয়েছেন, নাইজেরিয়ার হাফসাত আবিওলা, কম্বোডিয়ার মু সোচুয়া, গুয়াতেমালার অ্যানবেলা ডে লিওন, উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইনেজ ম্যাক-করম্যাক, আফগানিস্তানের ফরিদা আজিজ, রাশিয়ার রিসল্যান্ড মেরিনা পিসক্লাকোভা-পার্কার এবং পাকিস্তানের মুক্তার মাই।
হাফসাত আবিওলা নাইজেরিয়ায় মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী। হাফসাতের বাবা-মা দুজনেই ছিলেন মানবাধিকারকর্মী। এক সময় হাফসাতের বাবা ও মাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর হাফসাত গড়ে তোলেন ‘কুদিরাত ইনিশিয়েটিভ ফর ডেমোক্রেসি’। এর মাধ্যমে নাইজেরিয়ার মেয়েদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও নের্তৃত্ব বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয়।
মু সোচুয়া ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী। যিনি দেশটির তৎকালীন মন্ত্রীসভার মাত্র দু’জন নারীর একজন। কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের যৌন বাণিজ্যজনিত নারীপাচারের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য ২০০৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হয়েছিলেন। মু সোচুয়া ২০০৮ সালে কম্বোডিয়ার ৪৮২টি গ্রামে মানুষের ঘরে ঘরে ঘুরে জাতীয় সংসদের সদস্যপদ লাভ করেন।
অ্যানবেলা ডে লিওন শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে এবং তার পরিবারকে দারিদ্র্য মুক্তির পথে নিয়ে এসেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে সাংসদ পদে অধিষ্ঠিত অ্যানবেলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সুবিধা বঞ্চিতদের বিশেষ নারী ও আদিবাসী গোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তার সোচ্চার লড়াইয়ের জন্য মৃত্যুর হুমকিও পেয়েছেন।
আইরিশ কংগ্রেস অফ ট্রেড ইউনিয়ন্সের প্রেসিডেন্ট আইনেজ ম্যাক-করম্যাক ছিলেন মানবাধিকার, নারী-অধিকার, শ্রম অধিকার ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে নিবেদিত নারী। সংখ্যালঘুদের সমঅধিকার ও ন্যায্য শ্রমনীতির সমর্থনে কাজ করে আইনেজ ১৯৯৮ সালের গুড ফ্রাইডে শান্তিচুক্তির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অসুস্থতাজনিক কারণে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুবরণের আগে পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণে নিরলস লড়াই করে গেছেন আইনেজ।
আফগানিস্তানে তালিবান শাসনামলে নারীদের অধিকারহরণ ও সামাজিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও লড়াই করতে গিয়েই ফরিদা আজিজ একজন সমাজকর্মীতে পরিণত হন। স্বদেশে বার বার জীবননাশের হুমকির কারণে বর্তমানে তিনি তার দুই সন্তানসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। তিনি আফগানিস্তানে নারী অধিকার ও শান্তিরক্ষার সপক্ষে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৯৩ সালে প্রবল প্রতিকূলতার মুখে মেরিনা পিসক্লাকোভা-পার্কার কাজ শুরু করেন নিজগৃহে। নির্যাতনের শিকার নারীদের তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করার জন্য প্রথম হটলাইন সেবা চালু করেন তিনি। যা ক্রমশ বড় হয়ে সেন্টার ‘এনা’য় পরিণত হয়। এ সংস্থা থেকে লক্ষাধিক রাশিয়ান নারীকে বিবিধ সমস্যার প্রয়োজনীয় উপদেশসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
একটি তথাকথিত ‘অনার ক্রাইম’র উচিত শান্তিস্বরুপ মুক্তার মাইকে গণধর্ষণ করেন চারজন পুরুষ। সারা পৃথিবীতে খবরের শিরোনামে স্থান পায় মুক্তার মাই ও তার হৃদয়বিদারক কাহিনী। এরকম পরিস্থিতিতে অন্য দশজন নারীর মতো আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে সাহসী মুক্তার তার ধর্ষকদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করেন। তিনি মেয়েদের উন্নত জীবনের পথ দেখবার জন্য স্কুল গড়ে তোলেন এবং বর্তমানে শিক্ষার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছেন।
এই ৭ আলোচিত নারীর জীবন কাহিনী নিয়েই রচিত হয়েছে ‘সেভেন’ প্রামান্যচিত্রটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হ্যান ফুগল এস্কজার, ভুটানের রাষ্ট্রদূত পেমা চোডেন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মিরিতা লুনডিমো, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রিডিরেক্টর ফারাহ কবির, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইম্যান ইন্টাপ্রেনার্সের প্রেসিডেন্ট রোকেয়া রহমান, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ওয়েঞ্জা ক্যাম্পস দা নোব্রেজা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৫