ঢাকা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট চলছে না, এখন অবৈধভাবে ক্ষমতায় যেতে সহিংসতার মতো অবৈধপন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে।
প্রায় দুই মাস ধরে চলে আসা বিএনপি জামায়াত জোটের সহিংস আন্দোলন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর শনিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, সংলাপ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি একথা বলেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিজিওনাল এন্টি টেরোরিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (রাত্রি) আয়োজিত গোলটেবিল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক জিনাত হুদা। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিজিওনাল এন্টি টেরোরিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (রাত্রি) নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) একে মোহম্মদ আলী শিকদার।
অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি সঠিকভাবে শিক্ষিত হতে না পারেন তা হবে বড় ধরনের ক্ষতি। এটি যে কতবড় ক্ষতি তা বুঝতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে।
সাবেক মন্ত্রী জাফর ইমাম বলেন, এই সহিংসতা কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব এটি নিয়ন্ত্রণ করা।
অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, সংলাপের নতুন ফর্ম নিয়ে চিন্তা করতে হবে। যারা প্রকাশ্যে রাজনীতি করছেন তাদের কোনো অবস্থাতেই সন্ত্রাস সহিংসতার পথে যাওয়া যাবে না।
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, এটি কোন রাজনীতি যে আজ ৬০ দিনেও এর বিরুদ্ধে আমরা কিছু বলতে পারছি না। যদি এটি গঠনমূলক রাজনীতি হতো তাহলে যা চলছে তা চলতে পারতো না। যখন আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই তখনই তথাকথিত রাজাকারেরা বোমাবাজি করছে। আজ এসবের অবসান ঘটিয়ে গঠনমূলক রাজনীতি চাই। যে রাজনীতিতে দেশ এগিয়ে যাবে, ব্যবসার প্রসার ঘটাবে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জামায়াতের নেতাদের যাদের বিচার হচ্ছে তাদের বাঁচাতে হবে। তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য যদি হয় এদের বাঁচানো তাহলে ১৬ কোটি মানুষ তা প্রতিহত করবে।
তিনি বলেন, আজ আমাদের চেতনার ২১ ফেব্রুয়ারির দিনেও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শহীদ মিনারেও বোমা ছোঁড়া হচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন করেন, কোন স্বার্থে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে কেন মারা হচ্ছে। এর উত্তর আমাদের জানা আছে। এখানে সম্পাদকরা আছেন, তারা জানেন সংবাদের পেছনে সংবাদ থাকে। এজেন্ডার পেছনে এজেন্ডা থাকে।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ৭ মার্চের ভাষণে অনুপ্রেরণা পাই। আজ আমরা কঠিন অবস্থা অতিক্রম করছি। ৭ মার্চও কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। সবার বক্তব্যই এক জায়গায় রয়েছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা নাকি সংলাপ। সন্ত্রাসের কাছে কি আপনি মাথানত করবেন। যারা পেট্রোল বোমা ছুঁড়ছে, এর পেছনে অর্থায়ন করছে, মদদ দিচ্ছে তাদের সঙ্গে সংলাপ করে কি আপনি সামনের দিকে যেতে পারবেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি। শুধু সংলাপ নয়, আজ আমরা এর শেষ দেখতে চাই। যদি দেশের ভালো চান তবে এসব সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে যে মুক্তি ছিল তা ছিল রাজনৈতিক মুক্তি। ৭৫ এ কারণেই আজ দেশের এই অবস্থা। আমাদের বিশ্বাস করতে হবে শেখ বংশই দেশকে স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছে। তৃতীয় শক্তির উত্থান কখনোই আমরা চাই না। ২০১৩ সালে সংলাপ কতটুকু প্রয়োজন ছিল, আর আজ কতটুকু প্রয়োজন তা বিবেচনা করতে হবে।
দুই মাসের হরতাল অবরোধে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে মদদ দিতেই ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করা হয়। আর এর কারণ একটাই। ১৫ আগস্ট না হলে ষড়যন্ত্র ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটতো না।
অ্যাডভোকেট মুহম্মদ মহসীন বলেন, কারা সন্ত্রাস করছে আমি তা জানি না। তবে সংলাপ হতেই হবে।
বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবু হেনা বলেন, স্বাধীন দেশের রাজনীতি হবে গণমুখী। বর্তমানে যা হচ্ছে তা রাজনীতির কারণেই হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী তাদের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত নেতাদের রক্ষা করার জন্য সহিংসতা করছে। আজ একজন ক্ষমতায় যেতে চান, আরেকজন ক্ষমতা ধরে রাখতে চান।
তিনি বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে আমার কারণেই ৬ জঙ্গির ফাঁসি হয়েছিল। আমি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। এজন্য দল ও দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
অভিনেত্রী শমী কায়সার বলেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরীসহ ৭১ সালে যারাই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন মুক্তচিন্তার মানুষ। যারাই মুক্ত চিন্তার কথা বলছে তাদের ওপরই হামলা হচ্ছে। ব্লগার অভিজিৎকেও একই কারণে হত্যা করা হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না তারাই হামলা করছে।
শমী কায়সার বলেন, বঙ্গবন্ধু সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর এই অগ্রযাত্রায় স্বাধীনতায় অবিশ্বাসীরা বারবার আঘাত হেনেছে।
প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের যে ভাষা ছিল ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে তাণ্ডব হয়েছিল তা এক নয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড, শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডসহ সব হত্যাই ছিল মুক্ত চিন্তার ওপর হামলা।
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, হরতাল অবরোধ যখন থাকে না, তখন ককটেল ও পেট্রোল বোমা থাকে না। হযরত মুহাম্মদ স: বলেছেন, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। এই জঙ্গিবাদ দিয়ে ইসলাম কায়েম করা যাবে না।
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা সংলাপের কথা বলছে, তাদের কয়েকজনকে বসিয়ে দেন। ওনারা যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন থেকে শুরু করে কয়েকটি বিষয়ে একমত হতে পারেন তাহলেই বোঝা যাবে।
অ্যাডভোকেট এ এম আমিনুদ্দিন বলেন, আপনারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সবাই চিহ্নিত করে চার্জশিট দিয়ে বিচারের আওতায় আনুন। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সন্ত্রাস বন্ধ করা যাচ্ছে না।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, এদেশে সহিংসতার রাজনীতি নতুন নয়। তবে এবারের বিষয়টি ভিন্ন। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি এদেশে ছিল না। যারা বলছে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হলে এটি হতো না, আসলে বিষয়টি এরকম নয়।
তিনি রাষ্ট্রের সুশাসন নিশ্চিত করে এসব সহিংসতাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, দীর্ঘমেয়াদে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জাগরণের মাধ্যমে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
বিকেএমইএ এর প্রথম সহ-সভাপতি এসএম আসলাম সানি বলেন, যখন আমরা স্বপ্ন দেখছি স্বাধীনতার ৫০ বছরে রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাবো, মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবো। সেই সময় রাজনীতির নামে যা হচ্ছে তাকে রাজনীতি বলা কঠিন।
তিনি বলেন, দেশ যদি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়, তাহলে যারা পশ্চাদপদ রাজনীতি করে তাদের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে। বিএনপির মতো একটি দল জামায়াতের মতো দলের সঙ্গে রাজনীতি করায় তাদের ধ্যানধারণা পাল্টে যাচ্ছে। সমস্ত অধিকার ধ্বংস করে শুধু একটি অধিকার রক্ষা করা কঠিন।
আসলাম সানি বলেন, আমরা দেখেছি কিভাবে মাগুরা মার্কা নির্বাচন হয়েছে, কিভাবে ভুয়া ভোটার তৈরি করা হয়েছে। পদে পদে দুর্নীতির কারণে সমস্ত উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তবে অবরোধ সত্ত্বেও গেল ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি ছিল ৫ শতাংশের বেশি।
অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এশিয়ান টিভি, একাত্তর টেলিভিশন ও এসএ টিভি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৫
** দুষ্টের দমন এখনই
** সংলাপ নয়, সন্ত্রাসের শেষ দেখতে চাই
** সংলাপ হাসিনা-খালেদার মধ্যেই হতে হবে
** গঠনমূলক রাজনীতি চাই
** যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর আন্দোলন প্রতিহত করা হবে
** ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানানো খালেদার ভণ্ডামি
** এখন অ্যাকশনের সময়
** ব্যবসায়ীরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে
** এখন অ্যাকশনের সময়
** স্বাধীনতাবিরোধীদের মদত দিতেই ১৫ আগস্টের জন্মদিন
** বোমা বানানোর বিচার হচ্ছে না
** বর্তমানে যা হচ্ছে রাজনৈতিক কারণেই
** খালেদা কি গিনেস বুকে নাম লেখাতে চান
** যারা শুধু ভূ-খণ্ড চায় তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়
** অর্থায়ন বন্ধ না হলে সন্ত্রাস চলতেই থাকবে
** পুড়িয়ে মারার রাজনীতি এদেশে ছিল না
** খালেদা পাকিস্তানের উত্তরসূরী
** আইএসআইএ’র অর্থায়নে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত
** সন্ত্রাস পরিহার করলেই সংলাপ
** বিএনপি জোট শুধুই সন্ত্রাস করছে
** সব ধ্বংস করে একটি অধিকার রক্ষা করা কঠিন
** রাজধানীতে ‘সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, সংলাপ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা