ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

এএসআই ইব্রাহিমের বাড়িতে শোকের মাতম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৫
এএসআই ইব্রাহিমের বাড়িতে শোকের মাতম ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পালপাড়া, কচুয়া (বাগেরহাট): রাজধানীতে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)  ইব্রাহিম মোল্লার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার পালপাড়ায় চলছে শোকের মাতম।
 
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বার বারই মূর্ছা যাচ্ছেন নিহতের বৃদ্ধ বাবা আব্দুস সাত্তার আলী (৮২) ও মা আছিয়া বেগম (৬৮)।


 
ছয় ভাই-বোনের মধ্যে বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান ইব্রাহিমের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাড়িতে ছুটে এসেছেন চার বোনসহ নিকট আত্মীয়রা। ভাইয়ের এমন অকাল মৃত্যুর খবর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।
 
মা আছিয়া বেগমের কান্নার শব্দে ভারি হয়ে উঠেছে পালপাড়া গ্রামের বাতাস। রাতে জেলের দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে কেউই তাকে পারছেন না সান্তনা দিতে। মা আর বোনদের আহাজারি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না গ্রামের সাধারণ মানুষও।
 
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন দারুস সালাম থানার এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা।
 
শুক্রবার বিকেলে নিহতের গ্রামের বাড়ি জেলার কচুয়া উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নের পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের নবীন-প্রবীণ শত শত মানুষের ভিড়। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে তারা ছুটে এসেছেন ইব্রাহিমের বাড়িতে।
 
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি সরোয়ার মোল্লা জানান, সদালাপী ইব্রাহিম ছিলেন গ্রামের সবার চোখের মণি। তার মতো ছেলে মেলা ভার। গ্রামের গর্ব ছিলেন তিনি। কোরবানির ঈদেও স্ত্রী খায়রুন্নেছা বেগম, ৬ বছরের কন্যা জান্নাতি ও ২ বছরের ছেলে পারাগকে নিয়ে গ্রামে এসেছিলেন তিনি।
 
ইব্রাহিমের ভগ্নিপতি শাজাহান হাওলাদার বাংলানিউজকে জানান, ঢাকার দারুস সালাম থানার পোস্টিং হওয়ার পর থানার কাছেই একটি বাড়িতে গত কয়েক বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। কনেস্টবল পদে প্রায় ১২/১৩ বছর আগে চাকরিতে যোগদানের পর বছর খানেক আগে পদোন্নতি পান ইব্রাহিম।
 
নিহতের পাঁচ বোন জাহানারা, আনোয়ারা, মনোয়ারা, হোসনেয়ারা ও পেয়ারা বেগমদের সবারই বিয়ে হয়েছে। এদের মধ্যে সেজো বোন মনোয়ারা বেগমের স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১১ বছর আগে। তখন থেকেই তার একমাত্র মেয়ে আদুরি আক্তারকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকছেন মনোয়ারা। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে বোনের সংসারের সব খরচ চালাতেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ইব্রাহিম।
 
মনোয়ারা বাংলানিউজকে জানান, ছোট বোন পিয়ারা বেগম ও বোনজামাই জামাল ঢাকা থেকে ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
 
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাবা আব্দুল সত্তার মোল্লা (৮২) মাঝে মধ্যেই প্রলাপ বকছেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ছেলের আয়েই বেঁচে ছিলাম। তোমরা আমার ছেলেডারে মারলে কেন? ও তো কারো ক্ষতি করতো না’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৫ 
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।