ময়মনসিংহ: জোছনা পুলকিত রাত। আলো ঝলমলে ক্ষীণকায় ব্রহ্মপুত্রের বিস্তীর্ণ চর।
ঢাক-ঢোল, কাঁসার শব্দ, নাচ-গান আর উলু ধ্বনিতে ময়মনসিংহ শহর ছোঁয়া কাঁচারিঘাটের ব্রহ্মপুত্র নদের চিরচেনা বালুচরের সন্ধ্যা পরবর্তী চিত্রটাই যেন পাল্টে যাওয়া। চারিদিকে কড়া নিরাপত্তা বলয়। শহরের সব পথ যেন এসে মিলেছে ব্রহ্মপুত্রের এ পয়েন্টে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার দশভুজা দেবীর বিসর্জনকে ঘিরে এমনই উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছিল শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ব্রহ্মপুত্রের বুকে। মহানগরের প্রায় ৫০টি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় এখানে। আগতদের মুখে এ সময় রব উঠে, ‘দুর্গা মা কী জয়। ’
ব্রহ্মপুত্র নদ শুকিয়ে যাওয়ায় নদের পাড় থেকে পানি চলে গেছে অনেক ভেতরে। সেখানে জেগে আছে বিস্তীর্ণ চর। এ বালুচর পেরিয়ে দেবী দুর্গাকে নিয়ে যাওয়া হয় অনেকটা নদের ওপারের কাছাকাছি ক্ষীণ স্রোতধারায়। আর এটাকে কেন্দ্র করেই বিসর্জনে আসা লোকজন মেতে উঠেন সিঁদুর খেলায়। তাদের পদভারে লোকারণ্য আর মুখর হয়ে উঠে ব্রক্ষপুত্রের পাড়।
শুক্রবার বিকেল থেকেই ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বিসর্জন পর্ব শুরু হয়। এ বিসর্জনকে ঘিরে ময়মনসিংহ পৌরসভার উদ্যোগে বিশাল চর এলাকায় করা হয় নান্দনিক আলোকসজ্জা। এ বিসর্জন উপলক্ষে পৌরসভার উদ্যোগে নির্মিত মঞ্চ থেকে ভেসে আসে মাইকের আওয়াজ।
ব্রহ্মপুত্রের বুকে বিসর্জন দিতে আসা সারি সারি ট্রাকের উপরে আর জেগে উঠা বালুচরে উল্লাসে ফেটে পড়েন শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ। বিকেল থেকে গভীর রাত অবধি সেখানে অবস্থান নেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।
বালুচরে হেঁটে হেঁটে বিসর্জনে আসা বিভিন্ন মণ্ডপের লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছিলেন মেয়র টিটু নিজেই। তিনি যেখানেই যাচ্ছিলেন সেখানেই তাকে ঘিরে চলছিল হালের জনপ্রিয় ধারা সেলফির মহোৎসব। সানন্দে তাদের সঙ্গে সেলফি তুলছিলেন মেয়র।
রাতের আলোতে আলোকিত ব্রহ্মপুত্রের বুকে ট্রাকে করে আসছে প্রতিমা। আর গোটা চরজুড়ে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। গলায় ঝুলানো ডালায় জ্বলছে কুপিবাতি। বাদাম বাদাম বলে হাঁক দিচ্ছেন বিল্লাল হোসেন নামের এক যুবক। বাড়ি মুক্তাগাছা উপজেলায়।
সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি প্রায় আড়াই হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করেছেন এ যুবক। তার মতে, আমার মত আরো একশ’ ব্যবসায়ীর ব্যবসা আজ ভাল ব্যবসা হইছে। ক্রেতাও বেশি, বেচাও বেশি। আজ বেচতাছি আবার আমোদ-ফূর্তিও করতাছি। প্রত্যেক দিন যদি এমন হইতো।
খানিকটা অদূরে সাদা বুট আর বড়ই বিক্রি করছিলেন গৌরীপুরের দেলোয়ার হোসেন। বেচাকেনা কেমন, জিজ্ঞাস করতেই স্মীত হেসে উত্তর দিলেন, বেচাকেনা ভালই। ২/৩ ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার ৫শ’ টাকা বিক্রি করছি। মাল বেশি থাকলে আরো বেশি বিক্রি করতে পারতাম।
ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইকরামুল হক টিটুর সভাপতিত্বে ব্রহ্মপুত্র নদে দশভুজা দেবীর বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। ধর্ম যার যার আনন্দ সবার, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি জনপ্রিয় একটি স্লোগান।
সার্বজনীন দুর্গোৎসবের বিসর্জনে সব-শ্রেণি পেশার মানুষের মহামিলন মেলা ঘটেছে। সম্প্রীতির এ বন্ধন চির অটুট থাকবে, বলেন মন্ত্রী।
এ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি চেয়ারে বসেন ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির পুরোধা পুরুষ ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রিয় মেয়র ইকরামুল হক টিটু। দীর্ঘদিন পর পাশাপাশি দুই নেতার হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতি ও কুশল বিনিময় নজর কাড়ে ভক্ত, দর্শনার্থী ও পূজারীদের।
বাংলাদেশ সময় ০৪০৭ ঘণ্টা অক্টোবর ২৪, ২০১৫
আরএ