রাজশাহী: এক দশকেরও বেশি সময় পর রাজশাহীর পদ্মায় দেখা মিলছে রুপালি ইলিশের ঝলক। এতে সোনালি স্বপ্নে বিভোর পদ্মাপাড়ের জেলেরা।
রাজশাহী জেলা মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর বলছে, ইলিশ রক্ষায় জাটকা নিধন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অপরাধ কারেন্টজালের ব্যবহারও। কিন্তু সব কিছু জেনেও পয়লা নভেম্বরের আগে তারা অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না। কারণ আগামী পয়লা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর আগে জনসচেতনতা না থাকলে আবারও ইলিশ শূন্য হবে পদ্মা।
এদিকে, চরের ওপারে নদীঘেঁষা অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে পদ্মার উজানে থাকা রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, বাঘা ও চারঘাট এলাকায় ব্যাপকহারে জাটকা মাছ ধরা হচ্ছে। চরের ওপারেই চলছে লেনদেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মণ জাটকা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে পদ্মার শাখা নদীতেও দেখা মিলছে ইলিশের। জাটকা নিধন বন্ধ হলে এসব পয়েন্টে আগামী বছর থেকে বড় বড় ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর পবার বেড়পাড়া পদ্মার তীরের অধিবাসী মফিজ উদ্দিন জানান, উজানে গত ১৪-১৫ বছরে ইলিশের বিচরণ দেখা যায়নি। মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ নিধনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো। মানুষ একটু সচেতন হওয়ায় জাটকা নিধন কমে। যে কারণে পদ্মায় আবারও ইলিশের দেখা মিলছে। কিন্তু এভাবে নির্বিচারে জাটকা নিধন চললে আবারও পদ্মা থেকে হারিয়ে যাবে সুস্বাদু মাছ ইলিশ।
একই এলাকার জেলে রশিদ মিঞা বলেন, গত বছরই প্রথম তাদের জালে ধরা পড়ে ইলিশ। সেই বছরের তুলনায় এবার পদ্মা নদীতে ইলিশের পরিমাণ আরও বেড়েছে। ১৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকার পর গত ৯ অক্টোবর ইলিশ শিকারে বাধা কাটে। এ সময় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকায় মা ইলিশ উজান বেয়ে রাজশাহীর পদ্মায় আসতে পেরেছে। আর এ কারণেই জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে।
তবে আকারে ছোট হলেও পেটের দায়ে এই অঞ্চলের জেলার সেই মাছ শিকার করছেন বলে জানান তিনি।
অপর জেলে ফজলুর রহমান জানান, বর্তমানে চরের এপারে নদীর তীরেই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ (জাটকা) বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে নিজস্ব মোকামে নিয়ে বেশি দামে সেই মাছ বিক্রি করছেন। মাছের ওজন ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রামের মধ্যে এবং আকারে নয় ইঞ্চির চেয়ে ছোট।
এরপরও জীবিকার তাগিদে জেলেরা কারেন্টজাল দিয়ে ইলিশ শিকার করছেন বলে জানান তিনি।
রাজশাহী জেলা মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগের ও পরের ১৫ দিনকে ইলিশের উত্তম প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এসময় মা ইলিশ সাগরের লোনা পানি ছেড়ে নদীর মিঠাপানিতে এসে ডিম ছাড়ে। ওই সময় মৎস্য আইন প্রয়োগে পদ্মায় ইলিশের দেখা মিলেছে। তখন কেবল বাঘা ও চারঘাটেই প্রায় ৯০ হাজার মিটারের বেশি কারেন্টজাল ধ্বংস করা হয়।
পদ্মায় ইলিশের দেখা পেয়েই জেলেদের জাটকা নিধন প্রশ্নে রাজশাহী জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী জানান, আগামী পয়লা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর আগে সবকিছু জেনেও তারা অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না।
এরপরও ইলিশ রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়াতে তারা ইতোমধ্যে স্থানীয় জেলেদের নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৫
এসএস/এএ