ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

যন্ত্রে আলু রোপনে ৭৩, উত্তোলনে ৫১ শতাংশ খরচ কমবে

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
যন্ত্রে আলু রোপনে ৭৩, উত্তোলনে ৫১ শতাংশ খরচ কমবে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: যন্ত্রের সাহায্যে আলু রোপনে শতকরা ৭৩ শতাংশ আর উত্তোলনে ৫১ শতাংশ খরচ কমবে। এক্ষেত্রে আলু ও আলুর বীজের মানও ভালো হয়।

জমি তৈরির ঝক্কি-ঝামেলা নেই। ছুটতে হবে না শ্রমিকের পেছনে।
 
এছাড়া যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত সময়ে আলু রোপন ও উত্তোলন করা যাবে। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি থেকেও মিলবে মুক্তি।
 
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ফার্ম মেশিনারি অ্যান্ড পোস্টহার্ভেস্ট প্রোসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।
 
বারি’র ওই বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসরাইল হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, উন্নত প্রযুক্তির এ দুই যন্ত্র  ব্যবহার করে আলু চাষিরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। যন্ত্রে আলু চাষের খরচ সিংহভাগ কমে যাবে।
 
গবেষণায় দেখা যায়, যন্ত্রের সাহায্যে আলু রোপনে হেক্টর প্রতি জমি তৈরি, বীজ বপন ও শ্রমিক খরচসহ ব্যয় হয় সাত হাজার ৫৪ টাকা। একই পরিমাণ জমিতে সনাতন পদ্ধতিতে জমি তৈরি, বীজ বপন ও শ্রমিক খরচসহ ব্যয় হয় ২৬ হাজার চারশ’ টাকা।
 
এ হিসাবে যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে আলু রোপনে হেক্টর প্রতি খরচ বাঁচবে প্রায় বিশ হাজার টাকা। অর্থাৎ যন্ত্রটি ব্যবহার করে চার ভাগের তিন ভাগ কম খরচে চাষিরা আলু রোপন করতে পারছেন।
 
যন্ত্রের মাধ্যমে জমি চাষ, আলু বপন, বেড তৈরি একসঙ্গে করা যায়। আস্ত আলু ও কাট পিচ আলু উভয়ই রোপন করা যায় এ যন্ত্রের মাধ্যমে। এতে শ্রমিকের ব্যয় সাশ্রয় হবে ৯৪ শতাংশ।
 
বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে এ ধরনের ১০টি যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। আলু রোপনের যন্ত্রটি কিনতে ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
 
আলু উত্তোলনেও এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে চাষিরা লাভবান হতে পারেন। দীর্ঘ সময় ধরে আলু উত্তোলনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এ যন্ত্র ব্যবহার করে। এতে আলুর বীজের মানও ঠিক থাকবে।
 
যন্ত্রটি সহজেই পরিচালনা করা যায়। এতে আলু উত্তোলনের পর পরবর্তী ফসল বপনের জন্য জমিও প্রস্তুত হয়ে যায়। এ যন্ত্রটি কিনতে খরচ পরবে ৩০ হাজার টাকার মতো।

প্রচলিত পদ্ধতিতে এক হেক্টর জমিতে আলু উত্তোলনে শ্রমিক দরকার হয় ৬০ জনের মতো। কিন্তু যন্ত্রের সাহায্যে মাত্র ২১ জনের মাধ্যমে আলু উত্তোলন সম্ভব। এ যন্ত্রের সাহায্যে সব মিলিয়ে খরচ হয় আট হাজার তিনশ’ ৫৭ টাকা। যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি আলু উত্তোলনে খরচ হয় ১৭ হাজার একশ’ টাকা।
 
গত বছর মেশিনের সাহায্যে আলু লাগানোর পাশাপাশি উত্তোলন করেছিলেন রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার আলুচাষি আনিছুর রহমান।
 
তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে অনেক কম খরচে আলুর চাষ করা যায়। বেশি জমি হলে ভালো হয়। কোনো ঝামেলা ছাড়াই আলু চাষ সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতিতে আলু তোলার সময় জমিতে কম-বেশি আলু থেকে যায়। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে আলু তুললে একটি আলুও থাকে না।
 
তিনি জানান, জমিতে পানি দিতে একটু সমস্যা হয়। কিন্তু কৌশলে বেড তৈরি করতে পারলে এটিও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের মেশিন দিলে তারা বেশি উপকৃত হবেন বলেও জানান তিনি।  
 
আলু রোপন ও উত্তোলনের এ ধরনের যন্ত্র তৈরি করছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক ওলিউল্লাহ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আলু রোপন ও উত্তোলনে এ দুই যন্ত্র একবার কেনার পর দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারবেন চাষিরা। যন্ত্র দু’টি খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।
 
তিনি জানান, কৃষক পর্যায়ে এ যন্ত্রের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কোনো চাষি একবার কিনে নিলে তা দেখে একাধিক চাষি এ যন্ত্রগুলোর চাহিদার কথা জানাচ্ছেন।

তিনি দাবি করেন, দেশে অনেক ভালো প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এটিকে ধরে রাখতে হলে দরকার সরকারি সহযোগিতা।
 
সার্বিক বিষয়ে বারি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসরাইল হোসাইন বলেন, মাঠ পর্যায়ে এ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হলে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নতুন যন্ত্র হওয়ায় কৃষকরা প্রথমে কিনতে চাইবেন না। কিন্তু বিষয়টি যদি তাদের একবার দেখানো যায় তাহলে যন্ত্র কিনতে তারা আগ্রহ দেখাবেন।
 
কেননা এর মাধ্যমে আলু চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আলুর বীজের গুণগত মানও ভালো রাখা সম্ভব।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
একে/জেডএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।