ঢাকা: ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা অঞ্চল দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের পথটি নতুন নয়। তবে বাংলাদেশি অভিবাসী ইচ্ছুকরা সচরাচর এ পথে পাচার হন না।
সূত্রমতে, এরা নৌকাপথে অস্ট্রেলিয়া পৌছাতে ব্যর্থ অভিবাসী ইচ্ছুক এবং ইন্দোনেশিয়ায় স্বল্পকালীন শরণার্থী ক্যাম্পের অথবা বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর বা ইন্দোনেশিয়া হয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছে।
এরই মধ্যে মালয়েশিয়ায় ১ হাজার ৭৫২ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে অবৈধভাবে প্রবেশ করানোর অভিযোগে একটি মানব পাচারের সিন্ডিকেটকে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে মালয়েশিয়া পুলিশ। গত ১৩ মাসে এই সিন্ডিকেটটি বেশ সক্রিয় ছিলো। পুলিশ একই সঙ্গে ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যার মধ্যে ৫০ জনই বাংলাদেশি।
গত ১৫ অক্টোবর পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল তান শ্রী খালিদ আবু বকর জানিয়েছেন, সেলানগর এবং নেগ্রি সেমবিলানে ২ মাস অভিযান চালানো হয়। আটক হওয়া ৬৪ জনের মধ্যে ৪৬ জনই পাচার হওয়া বাংলাদেশি। বাকি ১৮ জনের মধ্যে রয়েছে দালাল, পথপ্রদর্শক, যানবাহন সরবরাহকারী, বাসায় রাখা মালিক এবং সঙ্গী।
তিনি বলেন, গত বছরের শেষ দিক থেকে এই সিন্ডিকেটটি ইন্দোনেশিয়া থেকে অভিবাসীদের পাচার করে। ‘আটকৃতদের মধ্যে দুইজন দালাল, ছয়জন সাহায্যকারী, তিনজন যানবাহন সরবরাহকারী, তিনজন বাড়ির মালিক এবং চারজন বার্তাবহনকারী। এদের মধ্যে ১৩ জন স্থানীয়, চারজন বাংলাদেশি এবং একজন ইন্দোনেশিয়ান।
তিনি বলেন, এরা সবাই গত আগস্টের ১৩ তারিখ থেকে অক্টোবরের ১৩ তারিখের মধ্যে আটক হয়েছে সেলানগর এবং নেগ্রি সেমবালিন থেকে। এই অভিযানে চারটি গাড়ি, ২৩ হাজার ১০০ রিঙ্গিত, ৪৬ জন বাংলাদেশির পাসপোর্ট, ৫৫টি মোবাইল ফোন, চেইন, একটি চাবুক এবং কিছু নোটবুক জব্দ করা হয়েছে। সেলানগর থেকে সিন্ডিকেটটি পরিচালিত হয়। এটি বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় বিস্তৃত।
খালিদ বলেন, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সিন্ডিকেটটি ১ হাজার ৭৫২ জন বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশ করিয়েছে। যেখানে দুই থেকে তিন কোটি রিঙ্গিতের লেনদেন হয়েছে।
সিকিউরিটি অফেনসেস (বিশেষ) অ্যাক্ট ২০১২ এবং ইনভেস্টিগেটেড আন্ডার দ্যা এন্টি ট্রাফিকিং ইন পার্সনস অ্যান্ড এন্টি স্মাগলিং অব মাইগ্রেন্টস এক্ট (এটিআইপি-এসওএম) ২০০৭ এর অধীনে সন্দেহভাজনদের আটক করা হয়। বিনা অনুমতিতে প্রবেশের কারণে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেতালিং জায়া ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ৪৬ জন অভিবাসী এবং একজন বাংলাদেশি বাড়ির মালিককে ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/১৯৬৩ এর সেকশন (১) (সি) এর অধীনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
খালিদ বলেন, তাদের সকলের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে এবং ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এরপর তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এছাড়াও স্থানীয় ৬ জন এবং দুইজন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে এটিআইপি-এসওএম এর অধীনে বিচার করা হবে। ছয় জন মালয়েশিয়ানসহ অন্য আটজনসকে সেকশন ৩(১) এবং প্রিভেনশন অব ক্রাইম অ্যাক্ট (পিওসিএ) ১৯৫৯ এর অধীনে ডিটেনশনে দেয়া হয়েছে। বাকি মালয়েশিয়ানদের জামিন দেয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ক্যারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ বুধবার সকালে বাংলানিউজকে বলেন, ইন্দোনেশিয়ানরা এই পথ আগেই ব্যবহার করতো। হঠাৎ করে এটার সঙ্গে বাংলাদেশি দালালরা জড়িয়ে পড়ে। গত এক বছরে নৌকাপথে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে অনেকেই ইন্দোনেশিয়ায় আটকে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় এ ধরনের সিন্ডিকেট আরো আছে। এখানে স্কিল ভিসার নামে, স্টুডেন্ট ভিসার নামে নতুন সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশি মেয়েদের বিভিন্ন নামে পাসপোর্ট করিয়ে, স্বামী-স্ত্রী সাজিয়ে পাচারের সংখ্যাও বাড়ছে। মালয়েশিয়ায় পুলিশের সামনেই এসব করছে মালয়েশিয়ান ও বাংলাদেশি দালালরা।
এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্যে মালয়েশিয়া পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের পাচার বন্ধ করতে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সাহায্য প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি সরকার এসব সিন্ডিকেট ধরতে না পারে, তবে দেশের আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। বিশ্বে বাংলাদেশিদের পাচার হওয়া একটি জাতি হিসেবে গণ্য করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
এমএন/জেডএম