শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রবেশের মুখেই শ্যাওলা! বামদিকের ওপরের দেয়ালে। সাদা দেয়ালের ওপর এমন সবুজ শ্যাওলা সহজেই চোখে এসে ধরা দেয়।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে বারোটায় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বারান্দায় পা রাখতেই দেয়ালের পিঠে লেগে থাকা সবুজ শ্যাওলাগুলো সবুজ আহ্বান হয়ে যেন স্বাগত জানালো।
সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলো হাসপাতালের প্রবেশমুখ দখল করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। রোগী দেখতে আসা স্বজনেরা অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখেছেন এসব সিএনজি অটোরিকশাগুলোকে। নানা ধরনের ফেরিওয়ালারা দিব্বি ফেরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদিক-ওদিক। তাদের বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই, পাওয়া গেল না কাউকেও।
নিচতলার ডানদিকের শেষ সীমানা রয়েছে ডাক্তারদের তালা দেওয়া কক্ষ। ওপরে লেখা ডাক্তার শব্দটি দেখে বোঝা যায় এটি কোনো ল্যাবরুম বা স্টোররুম নয়। সরাসরি ডাক্তারের রুম। কিন্তু ডাক্তাররা কোথায়? জানা গেল, এটি বন্ধই থাকে। দিনের পর দিন ধরে। খোলা হয় না। এ রুমের পাশেই দু’টি মটরবাইক রাখা রয়েছে।
এ হাসপাতালের যেখানে-সেখানে মোটরবাইকগুলো পার্কিং করে রাখা। যেখানে রোগীর বসার স্থান রয়েছে তার পাশেই রয়েছে মোটরবাইক! এখানে-ওখানে। এগুলো দেখার কেউ নেই। মোটরবাইকের হাসপাতাল বললে বোধ করি ভুল বলা হবে না!
গ্রাউন্ড ফ্লোরের মাথায় রয়েছে ডিজিটাল এক্সরে ও সিটিস্ক্যান রুম। এ রুমের দেয়ালেও শ্যাওলা পড়া। তবে এগুলো আগেরটার মতো সবুজ নয়, কালো। কক্ষ দরজার কোনো কোনো অংশও গেছে ফেটে। এভাবে থাকলে এক সময় হয়তো লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) বীরেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব। তার রুমে এমন শ্যাওলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ৪/৫ আগে আমি লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
ডিজিটাল এক্সরে ও সিটিস্ক্যান রুমের উল্টোদিকেই রয়েছে দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিড়ি। এখানেই হাসপাতালের যাবতীয় আবর্জনা। ভাঙা টেবিল, বোর্ডের অংশ, বিভিন্ন প্লাস্টিকের অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে! এ যেন আবর্জনাময় সৌন্দর্য!
সবচেয়ে করুণ অবস্থা টয়লেটের। একে বলা যেতে পারে- ব্যবহারের অযোগ্য টয়লেট। নিচতলার পুরুষ কক্ষের চারটি টয়লেটের মধ্যে দু’টি পুরোপুরি ব্যবহারের অযোগ্য। অবশিষ্ট দু’টি কিছুটা ব্যবহারযোগ্য, তবে পরিস্কার নয়। দু’টি টয়লেটের একটিতে নিচের অংশে প্রায় ২/৩ ইঞ্চি পরিমাণ পানি জমে আছে। সে পানিতে রয়েছে মশা আর শ্যাওলার উপস্থিতি!
টয়লেট কক্ষের চারটি বেসিনের অবস্থা একেবারেই করুণ। কোনোটির মধ্যেই পানির কল নেই। পানির কল যেহেতু নেই, তাই পানিও নেই! ময়লা ছাই দিয়ে বেসিনটিকে লেপ্টে রাখা হয়েছে।
রোগীর সঙ্গে আসা সুহেল মিয়া জানান, মাসের পর মাস ধরে এমনই আছে টয়লেটগুলো। পরিস্কার করা হয় না। কোনো টয়লেট রুমেই বাল্ব নেই। রাত-দিন অন্ধকারই থাকে। তিনি আরো বললেন, দয়া করে পাশে মহিলা টয়লেটগুলো অবস্থা দেখেন। তাহলে আরো বুঝতে পারবেন।
গিয়ে দেখা গেল, এ হাসপাতালের মহিলা টয়লেটগুলোর সবক’টিই ব্যবহারের অযোগ্য!
তৃতীয় তলায় গাইনি বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে পেছনে গিয়ে দেখা গেল আরেক দৃশ্য! যেখানে লেখা রয়েছে ‘এখানে থুথু/পানের পিক ফেলা নিষেধ’ এর নিচেই ফেলা রয়েছে থুথু আর পানের পিক। তা যথেষ্ট পরিমাণে। এটা যেন ওই নিষেধের প্রতিই ঘৃণা প্রদর্শন!
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ও সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সুব্রত কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে অনেকবার লিখেছি। কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। হাসপাতালটি নতুনভাবে সংস্কারে কোনো প্রকল্পই গ্রহণ করা হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রাক্তন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী এ হাসপাতালটি পরিদর্শন করে নতুনভাবে সংস্কার করার কথা বলেছিলেন।
তিনি নতুন তথ্য যোগ করে বললেন, বর্ষার সময় এর অবস্থা আরো করুণ হয়ে যায়। বৃষ্টির পানি পড়ে হাসপাতালে!
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
বিবিবি/এএসআর