ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

৩ নভেম্বর: হত্যার কালিমামাখা আরো একটি দিন

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৫
৩ নভেম্বর: হত্যার কালিমামাখা আরো একটি দিন

ঢাকা: ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয় এই দিনে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে বর্বরোচিতভাবে হত্যার পর কারাগারের ভেতরে আরেকটি বর্বর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় ৩ নভেম্বর।

স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্র এদিন বঙ্গবন্ধুর আজীবনের রাজনৈতিক সহচর, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন সেই জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে জেলখানার ভেতর গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী ওই চক্র এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। এরই অংশ হিসেবে এবং দেশে যাতে কোনদিন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি দাঁড়াতে না পারে সেই ষড়যন্ত্র থেকেই জেলখানার ভেতরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থেকে এই চার নেতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান।

ঘাতক চক্রের লক্ষ্য ছিলো বাঙালিকে নেতৃত্ব শূন্য করে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের পদানত করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে আটক করে রাখার পর যে চার নেতা বঙ্গবন্ধুর হয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনেন সেই নেতাদেরও বঙ্গবন্ধুর মতো নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার সাক্ষী জেলহত্যা দিবস। দেশের আপামর জনতা যাদের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশকে স্বাধীন করেছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে এদেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন, সেই চার নেতাকে চরম নির্মমতার স্বাক্ষর রেখে ৩ নভেম্বরে হত্যা করা হয়।

এদিনটি তাই বাঙালি জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন, কালো অধ্যায়। বাংলার জনগণ জাতীয় এই চার নেতাক আজীবন স্মরণ করবে।

প্রতিবারের মতো এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শোকাবহ এ দিবসটিকে স্মরণ ও পালন করবে। এজন্য বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

সকাল ৭টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে জাতীয় তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ ও মনসুর আলীর কবর ও ১৫ আগস্টের শহীদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামরুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
এসকে/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।