ঢাকা: পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) উদ্ভাবিত সৌরশক্তি নির্ভর সেচ পদ্ধতি এবং দ্বিস্তর কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বিস্তারের মাধ্যমে সময়পোযোগী ও আধুনিক কৃষি বিপ্লবের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কৃষি কাজে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ কাজে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা হ্রাস করার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। সৌরশক্তিচালিত গভীর নলকূপের পানির বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে উপকারভোগীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করার জন্য নানা ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে বিভাগটি।
‘সৌরশক্তি নির্ভর সেচ পদ্ধতি ও বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে দ্বিস্তর কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০২০ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ), বগুড়া। প্রকল্পটি ৭টি বিভাগের ৪২টি জেলার ৭৫টি সাইটে বাস্তবায়ন করা হবে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এম এ কাদের সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুতের অভাবে প্রত্যন্ত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেচ ব্যবস্থা নেই বলা চলে। কৃষিতে পিছিয়ে পড়া এসব এলাকায় সৌরশক্তি নির্ভর সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে ৪২টি জেলার ৭৫টি দুর্গম এলাকাকে বাছাই করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সৌরশক্তি নির্ভর সেচ ব্যবস্থাই কৃষি বিপ্লব তৈরি করবে।
তিনি আরও বলেন, পাহাড় ও অনেক দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো এখনও হয়তো সম্ভব হয়নি। এর কারণে কৃষি থেমে থাকতে পারে না। এ লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে কৃষিতে এক ধরণের বিপ্লব সৃষ্টি হবে। ধানসহ নানা ধরণের কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁও, জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার ১৯টি সাইটে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
এছাড়া ঢাকা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর জেলার ১৮টি সাইটকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সাইট বেছে নেওয়া হয়েছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলা থেকে।
একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, বান্দরবান জেলার চারটি সাইটে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
অন্যদিকে বরিশাল, ভোলা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, রংপুর, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলার ২০টি সাইটকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত প্রধান কার্যক্রম: আরডিএ মডেলে সোলার প্ল্যান্ট ও দ্বিস্তর কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে বিভিন্ন অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। সৌরশক্তি নির্ভর গভীর নলকূপসহ সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে।
প্রকল্প এলাকায় সেচের পানির অপচয়রোধে ভূগর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ করার পাশাপাশি থাকছে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। সেচ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে থাকছে ওভারহেড ট্যাংক ও পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক।
পানি সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রকল্পের সুফলভোগীদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে।
প্রকল্পটি দ্রুত সময়ে হাতে নেওয়া প্রসঙ্গে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ জানায়, বাংলাদেশে মোট কৃষি জমির শতকরা ৭৫ ভাগ ধান উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। কৃষি উৎপাদনে সেচ একটি অন্যতম সহায়ক প্রধান নিয়ামক। বর্তমানে যেভাবে সেচ দেওয়া হচ্ছে, তাতে ১ কেজি ধান উৎপাদনে ৩ থেকে ৪ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। এতে কৃষি উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। তাই সেচ কাজে সৌর শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয় ও ধানসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদকে লাভজনক করার জন্য ফসলের নিবিড়তা বহুগুণে উন্নীত করা প্রয়োজন।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ আরও জানায়, দেশে সূর্যালোকের প্রাচুর্য থাকলেও সৌরশক্তিকে সংরক্ষণ করে রাত্রিকালীন বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন আশাব্যঞ্জক নয়।
দেশে সৌরশক্তির ব্যবহার খুব বেশি সম্প্রসারিত হয়নি। সৌরশক্তিকে সরাসরি ব্যবহারের মাধ্যমে দিনের বেলায় সেচ পাম্প পরিচালনা কার্যক্রম শুরু হলেও সৌর প্যানেল স্থাপনে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। পরিকল্পনার অভাবে এসব কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
এমআইএস/আরএম