ঢাকা: আঁকাবাঁকা লাইন তিন তলার সিঁড়ি বেয়ে নিচের প্রধান ফটকে এসেও শেষ হয়নি, তা গিয়ে রাস্তার ওপর পড়েছে! রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের প্রতিদিনের চিত্র এটি।
পাসপোর্ট পেতে এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুণে নথিপত্র জমা দিতে হয়, এরপর আবার অপেক্ষা।
এরপর সোনার হরিণ সেই পাসপোর্টের নাগাল পেয়ে সারা দিনের কষ্টের ক্লান্তি ভুলে কারও কারও মুখে দেখা যায় হাসি। আবার কেউ কেউ দেখান ক্ষোভ।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিরা নানা মতামত, মন্তব্য ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেন।
বিরক্তি নিয়ে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের একজন এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করে বলেই দিলেন, ‘কেউ পাপ করলে তবেই পাসপোর্ট অফিসে আসে’। কিছুক্ষণ পর আরেক জন বলে উঠলেন, ‘এরপর মরলেও আর পাসপোর্টের জন্য আসবো না’।
পাসপোর্টের জন্য রশিদ জমা দিয়ে রিসিভ শাখায় বহু মানুষকে দেখা যায় ফ্লোরে পেপার বিছিয়ে বসে থাকতে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকায় এক পর্যায়ে কেউ আবার কোমরে হাত দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে রয়েছেন। যদিও অপেক্ষমান মানুষের তুলনায় মাত্র কয়েকটি বসার আসন রয়েছে সেখানে। এসব আসন ঘিরেই শতশত মানুষকে বিরক্তির চাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
কিন্তু এর আগে আরও দুই মাস অপেক্ষার। যে কারো অবহেলায় পাসপোর্টের আবেদনে কোনো প্রকার ভুল থাকলে তা আবার সংশোধনী, একাধিকবার ব্যাংক ড্রাফটসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। বৈধ উপায়ে পাসপোর্ট নেওয়ার এই হলো উপায়। অনেকে দালাল ধরে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে অসাধু উপায়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকার ধামরাই থেকে পাসপোর্ট নিতে সকাল সাড়ে ৮টায় এই কার্যালয়ে আসেন গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিস হলো একটা ঘুরার পাল্লা। সেখানে ঘুরতে ঘুরতে দিন শেষ হয়ে যায়, কিন্তু কাজ শেষ হয় না। সামান্য ভুলের অজুহাতে এখানকার মানুষ ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। ’
তিনি আরও বলেন, আমার আগের পাসপোর্টটি হারিয়ে গেছে। এরপর গত দুই মাস আগে ব্যাংক ড্রাফটসহ নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করি। নির্ধারিত তারিখে একবার এসে জানলাম, আগের পাসপোর্টে নামের আগে ‘এমডি’ লেখা ছিলো না। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে নতুন আবেদনে ‘এমডি’ লেখার কারণে পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে না বলে জানানো হয়। সেই ভুল সংশোধনের জন্য আবার আমাকে ব্যাংকে যেতে হয়েছে, ব্যাংক ড্রাফট করতে হয়েছে।
এরপর সেই সমস্যার সমাধান হলেও নামে ‘মোস্তফার’ স্থলে ‘মুস্তফা’ লেখায় আবার ব্যাংকের মাধ্যমে সংশোধন করতে হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সেই ভুল পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদেরই, আর তা এখানেই সংশোধন সম্ভব ছিল, কিন্তু তারা তা করেননি। বাড়তি টাকা দিলে তারা সব কিছু আগেভাগে করে দেন।
অপেক্ষমানদের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে উৎফুল্ল মনে হচ্ছিল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রকিবুজ্জামানকে। তিনি জানান, সকাল ১০টার আগে শুধু পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়ান তিনি। বেলা তিনটার দিকে সেই কাঙ্ক্ষিত পাসপোর্ট হাতে পান। পাসপোর্ট অফিসের অব্যবস্থাপনার কারণে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের এই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
আরেক পাসপোর্ট প্রত্যাশী মুখলেছুর রহমানও একই কথা জানালেন, তিনিও সকাল সাড়ে আটটার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। যারা দালাল ধরে এসব কাজ করান তাদের কারণে লাইনে থেকেও পাসপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
টিএইচ/এমজেএফ/
** ভোগান্তির নাম পাসপোর্ট অফিস