ফরিদপুর: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার ঘোষণায় ভোটারদের নয় বরং দলের হাইকমান্ডের মন জয়ে মাঠে নেমেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে যে যার মতো লবিং করে যাচ্ছেন।
ফরিদপুরে ৫টি পৌরসভার মধ্যে নবগঠিত মধুখালী পৌরসভার নির্বাচন চলতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সীমানা নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা থাকায় ভাঙ্গা পৌরসভার নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল পৌর নির্বাচনের ২য় দফায়। ফলে এ দুই পৌরসভা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়নি।
যদি একবারে না হয়ে কয়েক দফায় নির্বাচন হয়, তবে আগামী ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচনে ফরিদপুরের তিনটি পৌরসভা ফরিদপুর, বোয়ালমারী ও নগরকান্দা পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
অন্যবারের মতোই এবারও নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি। তবে এবার দলভিত্তিক নির্বাচনের সিদ্ধান্তে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে শেষ পর্যন্ত কে কে থাকছেন মাঠে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ করে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। দলের সমর্থন পেতে লবিং-গ্রæপিংয়ে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
ফরিদপুর পৌরসভা
ফরিদপুর পৌরসভা ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। প্রাচীনতম এই পৌরসভাটি দেশের প্রথম শ্রেণির প্রথম পৌরসভা। ফরিদপুর জেলার প্রাণ ফরিদপুর পৌরসভাটি তার জনসংখ্যা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ, অফিস আদালতসহ প্রায় সবদিক বিবেচনা করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
ফরিদপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথু এবারের নির্বাচনে অংশ নেবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমদিকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার ইফতেখার হোসেন ইকু ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ বোসের নাম শোনা যাচ্ছিল। তবে এখন তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সমাজসেবক খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের নামই দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে এককভাবে আসছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় এই আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হলে দলের সকল ভেদাভেদ ভুলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার জন্যই কাজ করবেন। দীর্ঘদিন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করায় ভোটের মাঠেও এগিয়ে আছেন তিনিই।
পৌর এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীর মন্তব্য, দলীয় মনোনয়ন পেতে তার কোনো লবিংয়েরও দরকার হবে না। কারণ, তাদের দাবির প্রেক্ষিতেই মনোনয়ন চাইবেন তিনি। এক্ষেত্রে দলে অন্য কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকবেন না বলেই আশা তাদের।
ফরিদপুর পৌরসভায় অনেকটা নড়বড়ে অবস্থা বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টির। নিজের মধ্যে গ্রুপিং নিয়েই ব্যস্ত বিএনপির তিন গ্রুপ। বিএনপি থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদারেরছ আলী ইছা, এএফএম কাইয়ূম জঙ্গী, আফজাল হোসেন খান পলাশ, একেএম কিবরিয়া স্বপনসহ কয়েকজন নেতার নাম উঠছে।
তবে জামায়াত সরাসরি দলীয়ভাবে নির্বাচন না করতে পারায় আদর্শিক কারণে বিএনপির সঙ্গেই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বোয়ালমারী পৌরসভা
বোয়ালমারী পৌরসভায় এগিয়ে আছে বিএনপি। সেখানে বিএনপি নেতা আব্দুর শুকুর শেখই মেয়র পদে দলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বোয়ালমারী পৌরসভায় তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল তার এ টানা জয়ের কারণ বলে মনে করা হয়।
এবারও এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের মনোনয়ন পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। মাঠ পর্যায়ে জনসংযোগের পাশপাশি নিজ দলের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন তারা।
প্রভাবশালী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মীরদাহ পিকুল এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএম মোশাররফ হোসেনের ভাই মো. মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়া। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী এ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অপর তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলিম মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টু এবং মোশাররফ চৌধুরীও শোডাউন, সভা, সমাবেশ, মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
তবে পিকুল মীরদাহ ও বাবলু মিয়ার মধ্যে যে কেউ মনোনয়ন পাবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন। সে ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলের একাধিক নেতা।
বাবলু মিয়া এককভাবে তার লোকজন নিয়ে সভা সমাবেশ, গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে পৌর জামায়াতের আমির সৈয়দ নিয়ামুল হাসান ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
নগরকান্দা পৌরসভা
নগরকান্দা পৌরসভায় আগে ভাগেই ভোট উৎসবের আমেজ বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। ১৯৯৯ সালে গঠিত এ পৌরসভায় উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের মেয়র নির্বাচিত করে এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার আনতে চান।
ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামলেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়ালে। নগরকান্দা পৌর এলাকায় এখন পর্যন্ত মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য আগ্রহী আওয়ামী লীগের ৫ জন ও বিএনপির ৩ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।
বিএনপির যে সব নেতার নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের তেমন ভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় কয়েকজন নেতা অবশ্য জানিয়েছেন, দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরই বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামবেন।
অন্যদিকে মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বর্তমান মেয়র ও নগরকান্দা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান উদ্দিন মিয়া, সাবেক মেয়র আলিমুজ্জামান টুলু মোল্যা, পৌর যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মুরাদ হোসেন বিকুল, আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুল আলম বাবলু, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল, উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি আলিমুজ্জামান সেলু ও পৌর বিএনপির সভাপতি আছাদুজ্জামান আছাদ মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা অবশ্য এ নির্বাচনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন। অনেক নেতা আবার নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫
আরকেবি/এএসআর