শিবগঞ্জ (বগুড়া) রহবল থেকে ফিরে: ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৮টায় স্থির। এমন সময় মোবাইলে রিং বেজে ওঠে জিসান বাবুর।
মোবাইলের অপর প্রান্তে থাকা মানুষটি তাকে প্রশ্ন করেন, ‘মুকুল তোমার কে হয় ?’ জবাবে জিসান বলেন, ‘উনি আমার বড় ভাই হন। ’ ‘ভাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করছেন কেন?’ মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসে, ‘তোমার ভাইকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে। ’
খবরটি শোনার পর প্রথমে বিশ্বাস হয়নি তার। পরে বিভিন্ন সংবাদে মাধ্যমে ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন জিসান ও তার পরিবার।
মুহূর্তেই যেন পরিবারটির ওপর আকাশ ভেঙে পড়ে। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে মা-বাবা বার বার মূর্ছা যেতে থাকেন। ভাই-বোনের অবস্থাও একই। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পরিবারটি এখন পাগলপ্রায়। বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
বুধবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে এই চিত্র চোখে পড়ে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলি ইউনিয়নের রহবল পূর্বপাড়ায় অবস্থিত শিল্প পুলিশ সদস্য মুকুল হোসেনের (২৫) বাড়িতে।
একই দিন সকালে ঢাকার আশুলিয়ায় নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কর একটি চেকপোস্টে কর্তব্যপালনের সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন শিল্প পুলিশ সদস্য মুকুল।
সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, খুনের খবর শুনে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভীড় করছেন মুকুলের বাড়িতে। বাড়ির এক কোণে বসে বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন মুকুল হোসেনের মা-বাবা। দেওয়ালে হেলান দিয়ে কান্নাকাটি করছে মেঝ বোন। ছোট বোন কাঁদছে বাড়ির বাইরে গিয়ে। আরেক ভাই কখনও বাড়ির ভেতরে, আবার কখনও বাইরে গিয়ে কান্নাকাটি আর ছোটাছুটি করছে।
নিহত মুকুলের ছোট ভাই জিসান বাবু বাংলানিউজকে জানান, তাদের ৬ সদস্যের সংসার। বাবা শহিদুল ইসলাম অন্যের জমিতে চাষাবাদ করেন। মা মোর্শেদা গৃহিনী। জিসান বাবু রংপুর কারমাইকেল কলেজে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করেন। তার ছোট বোন সম্পা খাতুন স্থানীয় রহবল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ও সবার ছোট বোন মিষ্টি খাতুন রহবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
তিনি আরও জানান, তাদের সংসারে প্রচণ্ড অভাব। মাত্র চার বিঘা জমি তার বাবার সম্পদ। এর মধ্যে ১৫ শতক জায়গার ওপর বসতবাড়ি। বাকি সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়েছে।
এর কারণ জানতে চাইলে জিসান বাবু বাংলানিউজকে জানান, ২০০৮ সালের দিকে ভাই মুকুল হোসেন এসএসসি পাশ করে পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে চাকরি খোঁজা শুরু করেন। সে সময় এই সম্পত্তি বন্ধক রেখে মুকুল পুলিশে চাকরি নেন। এরপর থেকে তিনিই পুরো সংসারে চালিয়ে আসছিলো।
জিসান আরও জানান, তার ভাই ছুটিতে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে বাড়ি এসেছিলেন। ছুটি কাটিয়ে গত ২১ অক্টোবর কর্মস্থলে ফেরত যান তিনি।
জিসান বলেন, ‘অভাবী এই সংসারের জন্য ভাই-ই ছিল সবকিছু।
সংসারের যাবতীয় ব্যয় বড় ভাইই বহন করতেন। তাদের লেখাপড়ার খরচও দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তাদের এখন কি হবে। কিভাবে তাদের লেখাপড়া চলবে। সংসার কে চালাবে’ এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন জিসান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৫
এমবিএইচ/আরআই