বাড়ইপাড়া(আশুলিয়া)থেকে: থমথমে আশুলিয়া। নীরব আতংক আর অজানা ভয় বিরাজ করছে এলাকাজুড়ে।
সেখান থেকেই দ্বিতীয় দিনের মতো মামলার গুরুত্বপূর্ণ নানা আলামত জব্দ করে পুলিশ।
মূলত: ধারণা আর সন্দেহের ওপর ভর করেই শুরু হয়েছে- আশুলিয়ায় পুলিশ কনস্টেবল মুকুল হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। দুই অজ্ঞাতনামা মোটরসাইকেল আরোহী ও তাদের সহযোগীদের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে আশুলিয়া থানায়। মামলার তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়েছে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহাকে।
মামলার রহস্য উদঘাটন, তদন্ত কাজে সহযোগিতা আর আসামি গ্রেপ্তারে সহযোগিতার জন্য ঢাকা রেঞ্জের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলার চৌকশ পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে সাত সদস্যের তদন্ত দল। আর ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুর রহমানকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম ও শিল্প পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাওসার শিকদার।
তদন্তকারী ছাড়াও দুটি কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ বলয়ে শুরু করেছেন তদন্ত কাজ। এর বাইরে সিআইডি, ডিবি ও র্যাব করছে ছায়া তদন্ত।
ঠিক কারা, কি উদ্দেশে এতো বড় অপারেশন করে দ্রুত সটকে পড়তে পারলো-দায়িত্বশীলদের কারো কাছে প্রশ্ন করে মেলেনি কোন উত্তর।
‘ভাই বিষয়টি স্পর্শকাতর। এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা বারণ’ – বেশ বিণীতভাবেই এড়িয়ে গেছেন কর্মকর্তারা।
দুপুরে আশুলিয়া থানায় তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য কাজী আশরাফুল আজীমের কাছে মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি পরামর্শ দেন পুলিশ সুপার বা অতিরিক্ত ডিআইজির সঙ্গে কথা বলতে।
‘সরি আমরা কোন তথ্য দিতে পারছি না’ হাতে গোনা সাতটি শব্দ বাদে কোন বাড়তি শব্দ ব্যয় করেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জড়িতদের সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি অন্ধকারেই আছে পুলিশ। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কিংবা পরিকল্পনাকারীদের সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা পায়নি তদন্তকারীরা। গ্রেপ্তার হয়নি জড়িতদের কেউ।
তবে একজন কর্মকর্তা কিছুটা তথ্য দেবার আন্তরিকতা দেখালেও শেষ মুহৃর্তে বড় কর্মকর্তাদের ইশারায় চুপসে যান।
কেন এই লুকোচুরি! অগ্রগতি হলে ভালো না হলে নাই- সাফ বলে দিলেই তো পারে। মুখে কুলুপ আঁটার কি দরকার!- ভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনেককেই এই ক্ষেদোক্তি করতে দেখা যায় আশুলিয়া থানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্যে পুলিশ জানতে পেরেছে, হামলাকারীরা মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে গুলি ছুঁড়ে পালিয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় হাতে থাকা চাইনিজ রাইফেলের গুলি পর্যন্ত ছোঁড়ার সুযোগ পায়নি আক্রান্তরা। পুলিশ সদস্যদের পালাবদলের ঢিলেঢালা মুহূর্তকেই কাজে লাগিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে ঘাতকরা। পুলিশ বলছে, হামলাটি পূর্ব পরিকল্পিত। জড়িতরা প্রশিক্ষিত এবং উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর সদস্য - এমন ধারণা মাথায় রেখেই শুরু হয়েছে মামলার তদন্ত। চিহ্নিত করতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তার পাশাপাশি আশপাশের প্রতিষ্ঠানের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ক্যামেরার সহায়তা নিচ্ছে তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলেছে, পুলিশের দুটি টিম চন্দ্রা থেকে বাইপাইল পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশের শিল্প কারখানার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা ফুটেজ পরীক্ষা করতে মাঠে নেমেছে। এখন পর্যন্ত হাতে কোন ফুটেজ না এলেও আশাবাদী দল দুটি।
এদিকে ঢাকা রেঞ্জের পক্ষ থেকে তদন্তকারীকে ঘটনার রহস্য উদঘাটন, তদন্ত কাজে সহযোগিতা ও আসামি গ্রেপ্তারে সহায়তার জন্যে বিভিন্ন জেলা থেকে বাছাই করা সাত সদস্যের চৌকস পুলিশ সদস্য পাঠানো হয়েছে আশুলিয়া থানায়।
এরা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবুল খায়ের, এসআই সাইফুল ইসলাম, আড়াইহাজার থানার এসআই আব্দুস সালাম, গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আছাদুর রহমান, এসআই মো. ইকবাল, শ্রীপুর থানার এসআই মজিবর রহমান ও ময়মনসিংহ জেলার গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মলয় চক্রবর্তী।
এদিকে পরিকল্পিতভাবে কর্তব্যরত পুলিশকে হত্যার উদ্দেশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে গুরুতর জখম ও হত্যা করার অভিযোগে আশুলিয়ার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৩৩/৩০৭/৩০২ ও ৩৪ ধারায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৮।
মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়েছে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক(তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহাকে।
দ্বিতীয়দিনের মতো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, তদন্তকারী বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধিদের আনাগোনা।
সেখানে কথা হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ সুপার মোস্তফা কামালের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর। কোনভাবেই এই ঘটনাকে তুচ্ছ করে দেখার কোন অবকাশ নেই।
সিআইডি ছাড়াও পুলিশ, ৠাবসহ বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ আঙ্গিকে তদন্ত করছে। তদন্তের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না।
রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার পর মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে একই কায়দায় সাভারে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কর্তব্য পালনে সতর্ক অবস্থানের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই শুরু হয়েছে এই মামলার তদন্ত।
গত বুধবার সকাল পৌনে আটটায় আশুলিয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাইড়পাড়ার অদূরে নন্দন পার্কের সামনে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হানা দিয়ে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে মুকুল হোসেন নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে। এ ঘটনায় আহত হয় সেখানে থাকা আরো চার পুলিশ কনস্টেবল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
জেডএম