ঢাকা: নিরাপত্তা, বাঁচার মতো মজুরি এবং কারখানায় গণতান্ত্রিক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির ১ম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শ্রমিক নেতা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি শাহ্ আতিউল ইসলাম।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তাসলিমা আখ্তারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রানা প্লাজার নিখোঁজ শ্রমিক হৃদয়ের মা আঞ্জুয়ারা বেগম। সমাবেশ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জুলহাসনাইন বাবু।
সমাবেশে মিরপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় শাহ আতিউল ইসলাম বলেন, ১৯৬৯ সালে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সরকার ১২৫ টাকা ন্যূনতম মূল মজুরি ঘোষণা করে, যা দিয়ে তখন ৭ মণ চাল কেনা যেত। আর বর্তমান সরকার ঘোষণা করেছে ন্যূনতম মূল মজুরি ৩০০০, ভাতাসহ ৫৩০০ টাকা। এই টাকায় বর্তমান বাজারে আড়াই মণ চালও পাওয়া যায় না। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরে আজকে শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতা স্বাধীনতার পূর্বের তিনভাগের একভাগে এসে ঠেকেছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি, জীবনের নিরাপত্তা এবং শ্রমিকের মর্যাদাবোধ নিশ্চিত না করে পাকাপোক্ত শিল্প হিসেবে গার্মেন্ট খাত কোনভাবেই দাঁড়াতে পারবে না।
গার্মেন্ট শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের চুষে ছিবড়ে বানিয়ে দ্রুত মুনাফা বানিয়ে সটকে পড়তে চান, নাকি পোশাক শিল্পকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চান? অর্ধ কোটি শ্রমিককে বঞ্চিত করে কোনভাবেই এ শিল্প দাঁড়াতে পারবে না। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সংবিধান কায়েম করতে হলেও সুস্থ শিল্প পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, মন্ত্রী-এমপি এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, অথচ সাধারণ শ্রমিকদের জন্য জতীয় ন্যূনতম বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয়নি। গার্মেন্ট শ্রমিকদের যে মজুরি কাঠামো ২০১৩ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিলো, তা তখনো অপ্রতুল ছিলো; আর এখন তা দিয়ে কোনভাবেই কারো পক্ষে চলা সম্ভব নয়। ফলে টিকে থাকার জন্য শ্রমিকদের সাধ্যের অতিরিক্ত অভারটাইম করতে হয়।
অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন বলেন, গার্মেন্ট শিল্পে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন যার ৮০ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ৪০ লাখ নারী শ্রমিক কাজ করেন, যারা সরাসরি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি আয়ে অবদান রাখছে। গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করে পথ তৈরি করে দিচ্ছেন, আমরা সেই পথে হাঁটছি। যেদিন এই পথ বিশাল মহাসড়কে পরিণত হবে, সেদিনই বাংলাদেশের পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তন আসবে।
সভাপ্রধানের বক্তবে তাসলিমা আখতার বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরীনের মতো এত বড় বিপর্যয়ের পরও আমাদের দেশের সরকার ও মালিকপক্ষ শিক্ষা নিতে পারেনি। বিদেশি ব্র্যান্ড ও বায়ারদের দায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। তিন দশক অতিক্রান্ত হলেও শ্রম আইন নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণটাও নিশ্চিত করতে পারেনি।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের কাজ চলছে মনি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্ট ভবনের শহীদ তাজুল মিলনায়তনে। এ অধিবেশনে সংগঠনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
পিআর/এমজেএফ/