ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনা হানাদার মুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
খুলনা হানাদার মুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের খবরে সারাদেশে ঘরে ঘরে উড়ছে স্বাধীন বাংলার পতাকা।

কিন্তু স্বস্তি নেই খুলনার মানুষের মধ্যে। তখনও খুলনার শিরোমণিতে যুদ্ধ চলছে।
  
সাতক্ষীরা ও যশোর থেকে পালিয়ে আসা রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও পাকিস্তানি বিহারিরা এখানে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলো। ১৬ ডিসেম্বর রাতেও খুলনা কেঁপেছে ট্যাংক, কামান, বোমা ও গোলাবারুদের শব্দে।
 
এ সময় হানাদার বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ হয় খুলনার শিরোমণি, গল্লামারী রেডিও স্টেশন (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা), লায়ন্স স্কুল, বয়রার পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কলোনি এলাকা, ৭ নম্বর জেটি এলাকা, নূরনগর ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভবন, গোয়ালপাড়া, গোয়ালখালি, দৌলতপুর, টুটপাড়া, নিউ ফায়ার ব্রিগেড স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায়।
 
১৬ ডিসেম্বর শেষ রাতে খুলনায় প্রবেশ পথে গল্লামারীতে যুদ্ধ হয়। এতে দু'জন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন।
 
১৭ ডিসেম্বর ভোরে শিপইয়ার্ডের কাছে রূপসা নদীতে বটিয়াঘাটা ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি লঞ্চ এসে পৌঁছে। কিন্তু শিপইয়ার্ডের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা লঞ্চটিতে আক্রমণ চালায়, গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনীও লঞ্চ থেকে নেমে শিপইয়ার্ডের ওপারের ধান ক্ষেতে অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলিবিনিময়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন ও ১৬ জন আহত হন। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীরও কয়েকজন নিহত ও আহত হয়।
 
অবশেষে সব বাধা অতিক্রম করে ১৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেন। খুলনা সার্কিট হাউস দখল করার পর মেজর জয়নুল আবেদীন ও রহমত উল্লাহ দাদু যৌথভাবে সার্কিট হাউসে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী, আবুল কালাম আজাদ, রেজাউল করিম, গাজী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ হাদিস পার্কে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। মিত্র বাহিনী খুলনা শহরে প্রবেশ করার আট ঘণ্টা আগেই হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
 
৯ম সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল, ক্যাপ্টেন হুদা, ডা. শাজাহান মোস্তফাসহ কয়েকজন খালিশপুরে মিত্রবাহিনীর সদর দপ্তরে গিয়ে জেনারেল দলবীর সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হায়াত আলী খান খবর দেন যে তিনি তার বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে সম্মত হয়েছেন। আত্মসমর্পণের যাবতীয় বিষয় আলাপ-আলোচনা শেষে ব্রিগেডিয়ার হায়াত তার ব্রিগেড মেজর ফিরোজকে বলেন, ‘সব সৈন্যকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও- যুদ্ধ শেষ’। এরপর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের দপ্তর থেকে ব্রিগেডিয়ার হায়াত খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানের দিকে রওনা হন।
 
পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজিত বিধ্বস্ত সৈন্যরাও সার্কিট হাউস ময়দানের দিকে রওনা হয়। রাস্তায় তখন আবাল-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষের ঢল নেমেছে।
 
সবাই ছুটছেন খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানের দিকে। ১৭ ডিসেম্বর সার্কিট হাউস ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পর উল্লাস আর আনন্দে ফেটে পড়ে মুক্তিকামী জনতা।
 
খুলনা শহর মুক্ত হওয়ায় চারিদিক থেকে মুক্তিপাগল জনতা শ্লোগান দিতে থাকে ‘জয় বাংলা’। খুলনা নগরীর মুক্ত বাতাসে স্বাধীনতার পতাকা উড়তে শুরু করে। লাখো শহীদদের রক্তে ভেজা এ পতাকা আজও পতপত করে উড়ছে খুলনার আকাশে-বাতাসে।
 
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীতে বিজয় র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫     
এমআরএম/এমজেড

** ১৭ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ মুক্ত দিবস
  ** ফরিদপুরে বিজয়ের সাধ মেলে একদিন পর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।