ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনা প্রেসক্লাবে ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য’ উদ্বোধন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
খুলনা প্রেসক্লাবে ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য’ উদ্বোধন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে দেশের কোনো প্রেসক্লাবে স্বাধীনতার মহান স্থপতির পুর্ণাঙ্গ নান্দনিক ভাস্কর্য স্থাপনা এটিই প্রথম।

এর নামকরণ করা হয়েছে ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য’।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘স্বাধীনতার রক্ত সিঁড়ির’ পর এবার খুলনা প্রেসক্লাবে জাতির জনকের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলো।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাবে- এ প্রত্যয় এখন দেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীর। যে দেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে পারেন, তারা সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেশের অগ্রযাত্রাকেও অব্যাহত রাখতে পারবেন।

খুলনা প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না। অথচ পঁচাত্তরে তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করেছে।   দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালনার চেষ্টা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার এবং স্বাধীনতাবিরোধী তথা মানবতাবিরোধীদের বিচার করে দেশকে স্বাধীনতার চেতনায় ফিরিয়ে এনেছেন।   তিনি অদম্য সাহস নিয়ে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর তাদের বিচার করে ইতিহাসের দায়মুক্তি দিয়েছেন।
 
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মজবুত। প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে দেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন তার বড় প্রমাণ।   বর্তমান সরকারের স্বপ্ন হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করা।

এ লক্ষ্যে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

তিনি বলেন, যারা ইতিহাসকে বিকৃত করেন, তারা এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। তারা ঘৃণিত ও ধিকৃত।   জাতি এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে প্রয়োজন জাতির অতীত ইতিহাসকে আরও বেশি চর্চা করা।

তিনি আরও বলেন, খুলনা প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ আগামী প্রজন্মের কাছে ইতিহাস হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহম্মাদ আলমগীর, খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল এবং পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান।  

খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন  ভাস্কর্য নির্মাণ কমিটির আহবায়ক মল্লিক সুধাংশু, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা মহানগর ইউনিট কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবির, আওয়ামী লীগের খুলনা সদর থানা সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুমার রায়, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজ) সাধারণ সম্পাদক মুন্সী মাহবুবুল আলম সোহাগ এবং খুলনা প্রেসক্লাব ও কেইউজের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

ভাস্কর্য নির্মাণ কমিটির আহবায়ক মল্লিক সুধাংশু বলেন, ২০০৭ সালে আমি প্রেসক্লাব চত্বরে জাতির জনকের ভাস্কর্য স্থাপনের দাবি উত্থাপন করি। সেই থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দাবিটি উত্থাপিত হলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে ভাস্কর্য স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আজ সেই ভাস্কর্য উদ্বোধন হয়েছে দেখে আমি খুবই আনন্দিত।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার জীবনের সকল অর্জন, সকল প্রাপ্তি, সকল পুরস্কার দেশবাসীর জন্য উৎসর্গ করেছেন। সেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ জাতির জনকের এ ভাস্কর্যটি উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর মাধ্যমে তুলে দিলাম।

তিনি মনে করেন, যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে এ ভাস্কর্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখবে। ভাস্কর্যটি অনাগত কাল ধরে ভবিষ্যত প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শানিত করবে।

ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন শিল্পী প্রশান্ত দাশ ও শিল্পী সুকুমার বাকচী। এ ভাস্কর্যে শিল্পী জাতির জনকের আপোষহীন ও দৃঢ়চেতা অভিব্যক্তিই ফুটিয়ে তুলেছেন।  

স্যার ইকবাল রোডস্থ প্রেসক্লাবের বালু-মানিক মিলনায়তনের পূর্ব পাশে স্থাপিত ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের পর থেকেই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে সর্বস্তরের মানুষের দর্শনের জন্য উম্মুক্ত করা হয়েছে।

উন্নতমানের মার্বেল, হোয়াইট সিমেন্ট, মার্বেল ডাস্ট, লোহার রড ও এসএস রডসহ নানা সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে ভাস্কর্যটি নির্মাণে। ৩ ফুট বেদিসহ গ্রে রঙের এই ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৫ ফুট। এটি নির্মাণে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহনীয় ভাস্কর্যটি স্থায়ী হবে প্রায় ৫শ’ বছর।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এমআরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।