ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাতের কমলাপুর ছিন্নমূলে ভরপুর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
রাতের কমলাপুর ছিন্নমূলে ভরপুর রাতের কমলাপুর; ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা : কেউ হনহন করে ঢুকছেন, কেউ বেরিয়ে যেতে ভীষণ তৎপর। কেউ উদাস ভঙ্গিতে অপেক্ষায়। কেউ বাড়ি ফেরার প্রত্যাশায় পুলকিত। আবার কেউবা অজানা কারণে ব্যথিত, বিষণ্ণ।

ভোর থেকে মধ্যরাত পর‌্যন্ত এমন ভাবেই দিন-রাতের প্রহর কেটে যায় রেলস্টেশন কমলাপুরে । কিন্তু মধ্যরাতটা যেনো পুরোপুরি ভিন্ন।

 এ যেন কোনো অচেনা নগরী। বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত টিকেট কাউন্টারের সামনে হাজারখানেক লোক শুয়ে আছে।  কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই।

তোষক, বালিশ কিংবা মশার হাত থেকে রক্ষার কোনো উপায় নেই। না আছে লাইন ফাইলের কোনো বালাই। কে কোন দিকে মাথা দিয়ে রেখেছে, আর কার পা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। অনেকে ব্যাগ মাথার নিচে  বালিশ বানিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। অনেকের মাথার নিচে সেটুকুও নেই।

কেউ কেউ পেপার মুড়িয়ে বালিশের মতো করে মাথার নিচে দিয়েছে। আবার বিছানাও পেপার বিছিয়েই। কেউ আবার পুরোপুরি মাটির উপর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে। শীতের আগমনী বার্তায় কিছুটা ছুঁয়েছে তাদেরকেও। কেউ লুঙ্গি খুলে শরীর মুড়ি দিয়েছে। আবার কেউ গামছা জড়িয়ে শীত নিবারণের সংগ্রামে।
রাতের কমলাপুরতাদের মধ্যে মাঝ বয়সী থেকে বয়োবৃদ্ধ যেমন রয়েছে, তেমনি শিশুর সংখ্যাও কম না। যুবক এবং বয়স্করা কিছুটা গোছালো হলেও কম বয়সী শিশুদের অবস্থাটা সবচেয়ে করুন। তাদের না আছে মাথার নিচে কিছু, না আছে গায়ের নিচে কিছু। সারাদিন যে পোশাকে ঘুরে বেরিয়েছে সেই পোশাকেই মাটির উপর ঘুমিয়ে পড়েছে। শরীরে ধুলো ময়লার আবরণ জমেছে।

একটি শিশুকে দেখা গেলো মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। হাতের একদিকে দগদগে ঘা। মাথার কাছে পলিথিনের মধ্যে কতগুলো ট্যাবলেট। দেখেই বোঝা গেল, সদ্য ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। যখন তার সেবা যত্নের ভীষণ প্রয়োজন ঠিক তখন তার খোজ নেওয়ারই কেউ নেই। কি নির্মম নিয়তি।  
কি নির্মম নিয়তি
পাঁচটি শিশুকে দেখা গেল।  তারা একটি পেপার দিয়ে বালিশের মতো বানিয়েছে। তাতেই সবাই মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কোন ফাঁকে মাত্র দু’জনের মাথা সরে গেছে। আবার আরেকটি গ্রুপের একজনের মাথার নিচে কয়েকটি পেপার দেওয়া। আর সেই শিশুটিকে বুকে পেটে মাথা দিয়ে ঘুমিয়েছে আরও তিনটি শিশু।

কমলাপুর স্টেশনে কমবেশি প্রত্যেক রাতেই এমন লোকের সমাগম ঘটে। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে ভিড়টা খানিকটা বেশিই মনে হলো। কিশোরগঞ্জের চা বিক্রেতা আব্দুল কাদেরও সায় দিলেন।

ছিন্নমুল এই মানুষগুলো ফ্লাটফর্মে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টিকেট কাউন্টারের সামনে থেকে শুরু হয়েছে ঘুমানো লোকের লাইন। স্টেশন ছাপিয়ে পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে ঠেকেছে। যাদের বেশির ভাগই ফুটপাতের বাসিন্দা। আবার অল্প সংখ্যক যাত্রীও সামিল হয়েছে এই তালিকায়। যারা কেউ কেউ ট্রেন ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার কেউ ভোররাতে ট্রেন ধরে ঢাকা ছাড়তে আগেভাগেই হাজির হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়:০৭১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
এসআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।