তবে গত ক’দিন ধরে আঞ্জুমানপাড়া দিয়ে না আসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে।
সেখান থেকে ফেরার সময় বালুখালী, কুতুপালং, থাইংখালী, মোচুনীসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়া। এর মধ্যে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে সূয্যিমামা। এর মধ্যেই কথা হচ্ছিল অটোরিকশা চালক সোলায়মান মিয়ার সঙ্গে।
রামুর রেজুখাল এলাকায় তার বাড়ি। গত কয়েকমাস ধরে সাংবাদিকসহ রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মী নিয়ে নিয়মিত যাওয়া আসা করেন উখিয়া-টেকনাফে। সেখানকার কী অবস্থা? জানতে চাইলেই তার উত্তর, জিনিসপত্রের দাম চারগুণ পর্যন্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের অবস্থা হাঁস-ফাঁস। তারা ভালো নেই।
সোলায়মান মিয়ার কথার সত্যতা মিললো কুতুপালং, বালুখালী, খাইংখালী, আঞ্জুমানপাড়া এবং টেকনাফের বাজার ঘুরে ও সাধারণ মানুষসহ এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কথাতেও।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংস দমন-নিপীড়ন শুরু হওয়ার পর গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল নেমেছে। গত ক’মাসে এ পর্যন্ত ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও দৈনিক গড়ে দেড়-দুইশ’ পরিবার শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে আসছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজন বলছেন, অতিরিক্ত মানুষের চাপে উখিয়া ও টেকনাফে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত ওই এলাকার সাধারণ মানুষ।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ সমস্যার জরুরি সমাধান প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
একই কথা বললেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাও। উখিয়া-টেকনাফে ছয় লাখ মানুষ রয়েছেন। আর রোহিঙ্গা এসেছে ১১ লাখ। স্থানীয় জনগণের দ্বিগুণ রোহিঙ্গা।
‘এরই মধ্যে সেখানে স্থানীয়দের মধ্যে গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। ১২ টাকা কেজির আলু এখন ৬০ টাকা। ঢেঁড়শ ৯০ টাকা। শ্রমবাজার নষ্ট হয়ে গেছে। ’
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে টেকনাফের জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৯ জন। আর উখিয়ায় ছিল তখন ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭৯ জনের বাস। গত ছয় বছরে দুই উপজেলার জনসংখ্যা আরও বেড়েছে। এর সঙ্গে গত দুই মাসেই দু’টি উপজেলায় যোগ হয়েছে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়া আগে থেকেই দুই এলাকায় প্রায় ২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, আশেপাশেই গড়ে ওঠছে নতুন নতুন ভাসমান দোকান। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও দোকান খুলেছে। তবে এসব বাজার এখন দিনরাত মানুষে গমগম করছে। সাধারণ চাল-ডালের দোকান থেকে শুরু করে মানুষে ঠাসা থাকে ফার্মেসি কিংবা চিকিৎসকের চেম্বারও।
কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকতেই একটি ঝুঁপড়ি ঘর। যেখানে বিভিন্ন ধরনের সবজি ছাড়াও বিস্কুট ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এই অস্থায়ী দোকানের স্বত্বাধিকারী পুরনো রোহিঙ্গা রবি উল্লাহ বলেন, আগে কিছু করতেন না। এখন ত্রাণের টাকা দিয়ে সবজি কিনে এনে ক্যাম্পের পাশে বিক্রি করছেন।
একই অবস্থা দেখা গেলো কুতুপালং বাজারেও। সেখানে কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ও রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকান। প্রতিদিন বিকেলেই মানুষের ভিড়ে এসব বাজারে পা ফেলার মতো অবস্থা থাকে না।
দিনভর এসব দোকান থেকে নানা পণ্যের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি, শাকসবজি, পান-সুপারি কিনে কোমল পানীয় কিংবা খাদ্যদ্রব্য খেয়ে ক্যাম্পে ফিরছেন রোহিঙ্গারা। অনেককে দেখা গেলো এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে নিতেও।
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নুর আমেনা ছেলেকে নিয়ে সওদাপাতি করে ঘরে ফিরছিলেন। বললেন, ‘চাউল-ডাইল নঅ লাইগ্যে। ত্রাণ পাইয়্যে। ’
বিক্রেতারা জানান, বাজারে নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি। এছাড়া বেগুন ৭০, মুলা ৬০ ও ঝিঙা ৭০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে থাইংখালী বাজারেও সবজিসব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে দুই থেকে চারগুণ। সেখানে ২৫ অক্টোবর অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেলে এক কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। অথচ বাজারে এ আলুর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। বেগুন ১০০ টাকা, ঢেঁড়শ ৯০ ও মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা করে।
রোহিঙ্গা ঢলে শুধু নিত্যপণ্য নয়, বেড়েছে যানবাহনের ভাড়াও। তাই অনেকেই অন্য পেশা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানোর কাজে নেমে পড়েছেন। তেমনি একজন মো. রিয়াদুল। তিনি বলেন, যাত্রী অনেক, বসে থাকতে হয় না। ভাড়াও প্রচুর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
এমএ/জেডএস