দেহ ব্যবসা থেকে শুরু করে ছিনতাই, মাদক বিক্রিসহ হেন কোনো অসামাজিক কাজ নেই যে রাতের বেলায় পার্কটিতে হয় না। সন্ধ্যার পর পরই পার্কটির ভেতর কিংবা আশপাশ দিয়ে লোকজন হেঁটে যেতে চান না।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) গভীর রাতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় পার্ক ঘিরে এ চিত্র।
সরেজমিনে প্রথমেই দেখা যায়, পার্কের পাশে সুন্দরবন হোটেলের সামনে পুলিশ ও কয়েকজন পথচারীর ভিড়। তাদের কাছে গিয়ে জানা যায় হাসান নামে একজন পথচারী পার্কের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কয়েকজন মিলে তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তবে পুলিশের ধারণা হাসান পার্কের ভেতরের ভাসমান পতিতাদের সঙ্গে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্যই এসেছিলেন। পতিতারা তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা কলাবাগান থানার এসআই মালেকের।
সুন্দরবন হোটেলের সামনে থেকে পান্থকুঞ্জ পার্কের দিকে এগোতেই লক্ষ্য করা যায় এক শ্রেণির নারী ও পুরুষের আনাগোনা। এর মধ্যে নারীরা হচ্ছেন পার্কের ভাসমান পতিতা এবং বাকিরা এদের খদ্দের ও দালাল।
পান্থকুঞ্জ পার্কের ভাসমান পতিতা শিল্পী বাংলানিউজকে জানান, সে সহ শান্তা রোমা স্মৃতি এই পার্কে অবৈধ দেহ ব্যবসা করেন। তবে তাদের সঙ্গে হিজড়াদের একটি দলও রয়েছে এই কাজে।
টাকা ছিনতাইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তবে আমাদের যে দালাল মো.আজিজুর ভাই ও তার একটি দল এই ছিনতাই কাজ পরিচালনা করে।
শিল্পীর সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই দেখা মিলে মো.আজিজুরের। লাল শার্ট পরে একটি দল নিয়ে তিনি পার্কের আশপাশে ঘুরাঘুরি করছেন। আজিজুর নিজেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন।
পার্কে চলা অসামাজিক কার্যক্রমের প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই আজিজুর বলে, এর সঙ্গে সে জড়িত না। তবে তিনি বেশ কয়েক জনের নাম বলেন যারা এই কাজে জড়িত।
কিন্তু রাত ১টায় পার্কের সামনে দলবল নিয়ে কেন ঘুরাঘুরি করছেন এবং জড়িতদের নামই বা তিনি কীভাবে জানলেন এমন প্রশ্ন শুনে আজিজুর আর কোনো কথা না বলে চলে যান।
তবে শিল্পীসহ আরও বেশ কয়েকজন পতিতা বাংলানিউজকে জানান, খদ্দেররা পার্ক থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় আজিজুর তার দল নিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
এদিকে বাংলানিউজের প্রতিবেদক ও ফটো জার্নালিস্ট পার্কের অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিবেদন করতে এসেছে জেনে শাহবাগ থানার এসআই দিদার পান্থকুঞ্জ পার্কে রাত ১টা ৩০ মিনিটে কয়েকজন পুলিশ নিয়ে আসেন।
এসআই দিদার আসার পর দুইজন ভাসমান পতিতাকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু অধিকাংশ পতিতাকেই ছেড়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পরে পার্কের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় দিদার হিজড়া ও পতিতাদের দলছেন তারা যেন কিছুক্ষণের জন্য পার্ক থেকে সরে যায়।
এমতাবস্থায় বাংলানিউজের ফটো করেসপন্ডেন্ট শাকিল আহমেদ পুলিশের সঙ্গে পতিতা ও ছিনতাইকারীদের বোঝাপড়ার দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে পতিতাদের দলটি তাকে ইট দিয়ে ঢিল মারতে এগিয়ে আসে। আর এসব ঘটনা ঘটে পুলিশের সামনেই।
পরে কয়েকজন পতিতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশকে টাকা দিয়েই পার্কে চলে এই সব অসামাজিক কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৭
এমএসি/বিএস