পরিবার দু’টির সদস্যদের সঙ্গে গ্রামের কাউকে সম্পর্ক রাখতে দিচ্ছেন না। মাতব্বরদের চাপে এলাকার দোকানিরাও তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন না।
ডুবাইল গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই গ্রামের ইয়াসিন মিয়া (৫৩) নামে এক ব্যক্তি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুন হন। ঘটনার পর তার ছেলে শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই গ্রামের ১২ জনকে আসামি করে দেলদুয়ার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার কিছুদিন পর থেকেই মামলার আসামিদের পরিবারের লোকেরা গ্রামের মাতব্বরদের দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য নিহত ইয়াসিন মিয়া ও তার বড় ভাই মৃত মোকসেদ আলীর পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় ইয়াসিন মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম, ভাতিজা আসাদুল ইসলাম ইমনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। তারা আসাদুলদের একটি ঘরে আগুন দেয় এবং তাদের বাড়ির পাঁচটি কুকুর মেরে ফেলে।
এ অবস্থায় আসাদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬ জুন জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের সমন হাতে পেয়ে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন হত্যা মামলার আসামি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা। তারা একত্রিত হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুল মিয়া, এলাকার প্রভাবশালী রজব ভূইয়া, জালাল ভূইয়াসহ স্থানীয় মাতব্বররা ২৮ জুলাই গ্রামের মসজিদে সভা করেন। তারা সিদ্ধান্ত দেন নিহত ইয়াসিন মিয়া ও তার বড়ভাই মৃত মোকছেদ আলীর পরিবারকে ‘এক ঘরে’ করার।
গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে জানিয়ে দেয়া হয় এই দুই পরিবারের কারো সঙ্গে কেউ যেন সম্পর্ক না রাখেন। গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়া নিষেধ করা হয়। এলাকার দোকানগুলোতেও বলে দেয়া হয় যেন ওই দুই পরিবারের কাছে কিছু বিক্রি না করে। ফলে দু’টি পরিবারের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা।
রোববার (২৯ অক্টোবর) ডুবাইল গ্রামে গিয়ে কথা হয় ওই দুই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। নিহত ইয়াসিন মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, বাবা হত্যার বিচার চেয়ে আজ আমরা নির্যাতিত হচ্ছি। আসামিরা আমাদের এক ঘরে করে রেখেছে।
শহিদুলের মা আসমা বেগম বলেন, হত্যাকারীরা প্রভাবশালী। তাই তারা মামলা তুলে নেয়ার জন্য এক ঘরে করে চাপ সৃষ্টি করছে। গ্রামের কেউ মাতব্বরদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। তাই তাদের কথা সবাই মেনে নিয়েছে।
আসাদুল ইসলাম জানান, গত কোরবানীর ঈদে তাদের গ্রামের ঈদগায় নামাজ পড়তে দেয়া হয়নি। দোকানপাটে কিছু কিনতে গেলে দোকানিরা মাতব্বরদের ভয়ে কিছু বিক্রি করেন না।
ডুবাইল গ্রামের বাবুল স্টোর নামক মনোহারি দোকানের বাবুল ভূইয়া জানান, ইয়াসিন মিয়া ও মোকসেদ আলীর পরিবারের কাছে কোনো কিছু বিক্রি করতে নিষেধ করেছে সমাজের মাতব্বররা।
এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য কামরুল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, আসাদুল তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে যে মামলা করেছে তাতে গ্রামের মানুষদের হয়রানি করা হয়েছে। তাই সমাজের সবাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপর মাতব্বর জালাল ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ওই দুই পরিবার তাদের মত থাকবে, আমরা আমাদের মত থাকব। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। এটাই সমাজের সিদ্ধান্ত।
ডুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তিনি এক ঘরে করার ঘটনাটি শুনেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭
আরএ