রাজধানীর সদরঘাট-ফুলবাড়িয়া রুটে চলাচলকারী ঘোড়ার গাড়ি টমটমের কোচোয়ান নাইম এভাবেই ঘোড়ার গল্প শোনাচ্ছিলেন।
সদরঘাটের জনসন রোড থেকে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে চলাচল করে এসব টমটম।
গত ৪ বছর ধরে টমটমের কোচোয়ান ১৮ বছরের নাইম। বাবা আবুল হোসেনের কাছ থেকে পৈত্রিক সূত্রেই এক জোড়া ঘোড়া আর গাড়িটি পেয়েছেন তিনি। ঘোড়াগুলোর বয়স এখন ৬ থেকে ৭ বছর।
‘এখনো কেন টমটম চালান? জীবিকা নির্বাহের তো অনেক পথ আছে বা অন্য গাড়ি কিনতে পারতেন। আবার এই শহরের পথ কি আর আগের মতো আছে?’- জানতে চাইলে নাইম বলেন, ‘আমার বাবা একেবারে বাচ্চা বয়স থেকে টমটম চালাতেন। আমার দাদাও টমটম চালাতেন। এটা পারিবারিক ঐতিহ্য। আর আয়ও একেবারে খারাপ না, দৈনিক ২ থেকে ৩ হাজার টাকা হয়। এ পথে টমটম চালাতে কোনো প্রশাসনিক ঝামেলাও নেই’।
তিনি বলেন, ‘টমটম এমন একটি গাড়ি, যার ভাড়া রিকশার তুলনায় কম, কিন্তু গতি রিকশার চেয়ে বেশি। আবার ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের চেয়ে গতি কম, কিন্তু ভাড়া বেশি’।
নাইম বলেন, ‘এখানে প্রতিটি ঘোড়ার নাম আছে। সুলতান, আকবর, শাজাহান, সম্রাট- এসব নাম ধরে ডাকলে তারাও সাড়া দেয়। ঘোড়াগুলো শহরের মানুষের মতোই খুব বুদ্ধিমান। এমনকি ঢাকার রাস্তার গাড়ির চালকদের চেয়েও তারা বুদ্ধিমান। যদি আমরা কোচোয়ানরা ভুলও করি, ঘোড়াগুলো নিজেদের বুদ্ধি খাটিয়ে দাঁড়িয়ে যায় বা মোড় নেয়’।
‘তারা বোঝে, কোথায় কতো গতিতে দৌড়াতে হবে। যানজটে পড়লে কিভাবে অন্য ইঞ্জিনের গাড়ির মাঝে নিজেদের জায়গা করে নিতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচরে আমাদের বাড়িতেই থাকে আমার ঘোড়া দু’টি। এগুলো দেশি প্রজাতির ঘোড়া, ভার টানতে সক্ষম। তবে অনেক ভার নিলে অবশ্যই তা কষ্টের কারণ হয়’।
‘ঘোড়া মানুষের মতোই। অসুখ-বিসুখ না হলে অনেকদিন বাঁচে। আবার বয়স হলে কাজ না করিয়েই যত্ন করতে হয়।
জনসন রোডে ‘গুলিস্তান গুলিস্তান’ বলে যাত্রী ডাকছিলেন কোচোয়ান রফিক। তিনি বলেন, ‘এখানে টমটমের কোনো সিরিয়াল নেই। কয়েকজন যাত্রী পেলেই যাত্রা করি। ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। তা যাত্রী যেখানেই নামুক’।
বর্তমানে ৩২/৩৩টি টমটম এ রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। এক রাউন্ড ট্রিপে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। তবে যানজটের কারণে দিনে ৪ থেকে ৬টির বেশি ট্রিপ দেওয়া যায় না।
‘এই পিচঢালা রাস্তায় চলতে চলতে ঘোড়ার ক্ষুরের লোহার নালও বেশিদিন টেকে না। তাই বছর না ঘুরতেই আবার মেরামত করতে হয়। ভুষি, ঘাস, গম, যব ও ভুট্টা দেওয়া হয় ঘোড়াকে খাবার হিসেবে। এক জোড়া ঘোড়ার খাবাবে দৈনিক ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা খরচ হয়’ বলেও জানান রফিক।
পথে ঘোড়াদের অসুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘোড়া চাইলেও তার পা অন্য কোনোভাবে ফেলতে পারে না। একই তালে ভিন্ন গতিতে ফেলতে পারে। অনেক সময় মোটরসাইকেল বা অন্য পরিবহনগুলো গা ঘেঁষে ওভারটেক করে, যা তাদের বিচলিত করে। তবে ধীরে ধীরে সবকিছুর সঙ্গেই অভ্যস্ত হয়ে যায় ঘোড়াগুলো’।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
এমএন/এএসআর